বর্ধমান-হুগলীর সীমান্তের দেবীপুর গ্রামের ভট্টাচার্য পরিবার ১৮০০ শতকের শুরুতে যশোরে চলে এলেও ১৮৬০ সালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কথামত কালীনাথ ভট্টাচার্য শ্রীরামপুরে এসে বসবাস শুরু করেন। কালীনাথ ছিলেন সংস্কৃতের পণ্ডিত - এখানে এসে দে পরিবারের শিশুদের শিক্ষক হিসাবে কাজ শুরু করেন। সেই শুরু ভট্টাচার্য পরিবারের শ্রীরামপুরের দে স্ট্রীটে থাকা। কালীনাথের ছেলে দূর্গাপ্রসন্ন (স্থানীয়দের কাছে পাঁচুবাবু বলে পরিচিত) চিকিৎসক হতে চাইলেও পরে পেশা হিসেবে বেছে নেন বাড়ি তৈরির কাজকে। ব্রিটিশদের তত্ত্বাবধানে তৈরি করতে থাকেন একের পর এক জুট মিল, সরকারি-বেসরকারি বাড়ি।
অর্থাজনের সাথে সাথে তিনি ছিলেন শৌখিন মানুষ। কলকাতার রাজেন্দ্র মল্লিকের মার্বেল প্যালেস ও চিড়িয়াখানার অনুকরণে দূর্গাপ্রসন্ন তৈরি করেন এই ইউনিক লজ এবং ডগ কেনেল। মূল দরজার বাইরে আছে দুটি সিংহ মূর্তি - এই জন্য ২১ নম্বর দে স্ট্রিটের এই বাড়িটি ‘সিংহ বাড়ি’ নামে পরিচিত।
তাঁর কেনেলে গ্রেট ডেন, আইরিশ সেটার, ইংলিশ সেটার ইত্যাদি নানা রকমের বিদেশি কুকুর ছিল। উনিশ শতকের শুরুর দিকে দ্য ক্যালকাটা কেনেল ক্লাবের ডগ শোয়ে পরপর পুরষ্কারও জেতেন। এই বাড়িতে একসময় বিরাট পাখির সংগ্রহ ছিল, যেমন ভারতীয় ও বর্মার সাদা ময়ূর, কাকাতুয়া, ম্যাকাও, আফ্রিকান ও অস্ট্রেলীয় টিয়া, সাদা-কালো রাজহাঁস ইত্যাদি। পাখি ছাড়াও এই চিড়িয়াখানাতে ছিল হরিণ।
সদর দরজার সামনে দুই সিংহের একটি |
দূর্গাপ্রসন্নের মৃত্যুর পর বাড়ির খেয়াল রাখতে শুরু করেন তাঁর ছেলে নিখিলেশ ভট্টাচার্য। তাঁর বিয়ে হয় চারুচন্দ্র ভট্টাচার্যের বড় নাতনি পদ্মিনীর সঙ্গে। নিখিলেশের অবর্তমানে এখন মা পদ্মিনী ও ছেলে প্রদীপ্তই বুক দিয়ে আগলে রেখেছেন ওই পুরনো বাড়ি।
যদিও সারা সপ্তাহ ওঁনারা কেউ এখানে থাকেন না, প্রতি সপ্তাহ্নান্তে প্রদীপ্তবাবু ফিরে আসেন নিজের বাড়িতে। ২০২০ সালে আমরা ওঁনার সাথে যোগাযোগ করলেও সেই কোভিড সময়ে আর ইউনিক লজ ঘুরে দেখা হয়নি। সেই সময় ইউনিক লজে থাকার ব্যবস্থা ছিল না, তবে পেয়িং গেস্ট হিসেবে শনি-রবির বিকেলে প্রদীপ্তবাবুর সাথে চায়ে পে চর্চার ব্যবস্থা ছিল।
Unique Lodge (2018) |
ফেসবুক থেকে জানা যায় প্রদীপ্তবাবু একসময় এই পৈতৃক সম্পত্তি থেকে মন তুলে নিয়েছিলেন। ২০০৭ এর নভেম্বরের পর থেকে উনি ইউনিক লজকে নতুন করে গড়ে তোলেন। কম ছিল অনেক কিছুই - সময়, অর্থ এবং লোকবল, কিন্তু ইচ্ছেটা ছিল অদম্য। প্রায় দুশো বছরের পুরনো এই ইউনিক লজকে সংস্কার করে ছোটখাটো মিউজিয়ম বানানো যায় তার ইচ্ছা।
২০১৮এর পর থেকে ইউনিক লজের রং পালটে যায় |
২০১৮ সালে ইউনিক লজ নতুন ভাবে প্রকাশিত হয়। লজের উলটো দিকে আছে গাড়ি পার্কিং-এর সুন্দর ব্যবস্থা।
ইউনিক লজের পার্কিং-এর গেট |
Inside of Unique Lodge (Source: Facebook) |
ইতিহাসের সাথে একটু সময় কাটাতে চাইলে অবশ্যই একরাত কাটিয়ে আসুন ইউনিক লজে। প্রদীপ্তবাবুর কিউরিও সংগ্রহ সমেত ইউনিক লজের ঘড়িগুলি, দুষ্প্রাপ্য মার্বেলের মূর্তি, পোর্সেলিনের শিল্প নিদর্শন, বর্মা টিকের আসবাবপত্র এই সব দেখতে দেখতে আর তাদের ইতিহাস শুনতে শুনতে সময় কেটে যাবে।
প্রদীপ্ত ভট্টাচার্যের সাথে যোগাযোগের নম্বরঃ ৯৮৩০০ ৭১৭৮৭
তথ্যসূত্রঃ
https://www.anandabazar.com/aamarkolkata/roam-around/unique-lodge-can-become-your-next-week-end-destination-dgtl/cid/1264896
Unique Lodge on Facebook: https://www.facebook.com/profile.php?id=100054245180736
https://kinjalbose.wordpress.com/2018/09/09/unique-lodge-serampore/
No comments:
Post a Comment