শ্রীরামপুরের শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দ জীউর মন্দিরটি ৮৩, ঋষি বঙ্কিম সরণিতে অবস্থিত। এই মন্দিরের ঠিক পাশেই নিউগেট এ্যাথলেটিক ক্লাবের মাঠ।
সামনে নাটমন্দির সমেত এই মন্দিরটি একটি ছিমছাম মন্দির - তিনরত্ন চূড়া বিশিষ্ট।
এই মন্দিরের নাটমন্দিরটি ১৯৯০সালে ৬নং আখড়া বাটি লেন-বাসী শ্রী শীতল কুণ্ডু, শ্রী বিশ্বনাথ কুণ্ডু এবং ২৪ নং রাজা লেন, কলিকাতা-৯ বাসী শ্রীমতি মেনকা পাল তৈরি করে দেন।
শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দ জীউর মন্দির |
এই মন্দিরের পিছনে একটি দোতলা বাড়ি আছে, যেটি সম্ভবত মন্দিরের ভাড়ার ঘর এবং অতিথিশালা ছিল। এই বাড়িটির অবস্থা এখন খুবই খারাপ।
মন্দিরের প্রাচীন ইতিহাস গেটের বাইরে লেখা আছে, যা মূলত ভোলানাথ দত্তের ডায়েরী (দিনলিপি) থেকে নেওয়া।
"আসলে এটি শ্রীশ্রী রামচন্দ্রের মঠ। প্রায় ২০০ বছর পূর্বে দক্ষিণ ভারতের রামানুজ নামে এক সাধু এই মঠটি (এখন যেখানে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতাল) প্রথমে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । পরে শ্রীরামপুরে ১৮৩৬ সালে মিশনারীরা ঐ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা কল্পে মঠের কাছ থেকে জায়গাটা কিনে ঐ জায়গায় হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। তখন শ্রীরামপুরে দিনেমারদের রাজত্বকাল ।
মঠের জন্য নিউগেট স্ট্রীটস্থ অধুনা খষি বক্ষিম সরণি-ধর্মতলার কাছে, এখন যেখানে মন্দির অবছিত ঐ সমস্ত জায়গা ক্রয় করা হলো, প্রায় ৪/৫ বিঘা জমি ও পিছনে একটি ছোট পুষ্করিণীও ছিল।
ঐ জায়গায় মঠ স্থানান্তরিত হলো । প্রথমে মূল মন্দির ও নাট বাংলা প্রস্তুত হয় ও ভিতরে তিনদিকে একতলা খিলান আকারে বারান্দা, ঠাকুরের ভোগের ও ভাড়ার ঘর হয়।
ভাড়ার ঘরে প্রচুর পরিমান চাল, ভাল, ঘৃত ইত্যাদি ভোগের উপকরণ রাখা হত। এই সময় প্রথম মহন্ত মহারাজ প্রেমচাঁদ দাস গোস্বামী ছিলেন। এই মঠে দূরদূরান্ত থেকে বহু সাধু সন্ন্যাসী এসে থাকতেন । এনারা হাতি, ঘোড়া, উট ইত্যাদি সহযোগে মঠে আসতেন এবং মঠের দক্ষিণদিকে এখন যেখানে নিউগেট এ্যাথলেটিক ক্লাব সেখানে এ সকল প্রাণীদের রাখার ব্যবস্থা ছিল।
পরবর্তী সময়ে যখন দ্বিতল বাড়ী নির্মাণ হয় তখন মহন্তরা উপরে এবং পুরোহিতরা নিচে থাকতেন । গঙ্গাসাগর মেলা উপলক্ষ্যে সাধু-সন্ন্যাসী সমেত অনেক পুণ্যার্থী গঙ্গাসাগর যাবার সময় মঠে থাকতেন এবং ফিরিবার সময় পুনরায় ঐস্থান থেকে মঠে ঘুরে যেতেন । তাদের আহার-বিহারের সকল ব্যবস্থা মঠ থেকেই হত।
মেদিনীপুরেও এই মঠের কয়েকটি শাখা মঠ প্রস্তুত হয়েছিল । এই মঠের প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০ বিঘা জমি ও জমিদারি ছিল । এই সকল জমি থেকে উৎপন্ন ফসল নৌকা যোগে শ্রীরামপুরস্থিত মঠে আনা হত।
পূর্বে মুল মন্দিরটির ছাদ কাঠের কড়ি-বরগা দারা নির্মিত ছিলো, বর্তমানে মন্দিরের ছাদটি সংস্কার করে ঢালাই করা হয়েছে । আসল মন্দিরের গাঁথনি দেখলে মনে হয় এটা অতিপ্রাচীন। কাঠে পোড়ান নইকি পাতলা ইট দ্বারা গাঁথনি, মন্দিরের ভিতরে আগেকার মার্বেল পাথরের মেঝে, ঠাকুরের মার্বেলের মঞ্চটির সিঁড়ির দুধারে দুটি কুমীরের মূর্তি এবং মঞ্চের উপরে সামনের দু'কোনে দুটি কালো রঙের মার্বেলের হাতির মূর্তি আছে। পাট মন্দিরের ছাদ এখনো কড়ি-বরগার। যে শ্রীশ্রী রামচন্দ্রের অষ্টধাতুর মূর্ত্তি নিয়ে এই মঠটি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল সেই মূর্ত্তিটি এখনও বিদ্যমান । পরবর্তীকালে আরও দুটি রাধা-গোবিন্দের মূর্ত্তি প্রতিষ্ঠিত হয় । এখন মূল মঞ্চের দু'ধারে দুজোড়া রাধাগোবিন্দ মুর্তি ও মাঝখানে শ্রীশ্রী রামচন্দ্রের মুর্তি । এছাড়াও মঞ্চে অনেক বিগ্রহ আছে।
কোন এক সময়ে মহন্ত পদ নিয়ে বিবাদের জেরে মেদিনীপুরের সমস্ত জমিদারী বিনষ্ট হয়ে যায়। বর্তমানে রাধাগোবিন্দ মন্দিরের দেবতার নিত্যসেবার ভার মন্দির কমিটি গ্রহন করেছেন । এছাড়াও তাঁরা মূল মন্দিরের সামনে একটি নাট মন্দিরও নির্মান করে দিয়েছেন।"
Building opposite of Radha Gobinda Jiu Temple |
No comments:
Post a Comment