Pages

Showing posts with label Heritage Walk. Show all posts
Showing posts with label Heritage Walk. Show all posts

Monday, February 10, 2025

শ্রীরামপুরঃ রাজা কিশোরীলাল গোস্বামীর বাড়ি

শ্রীরামপুরে গোস্বামীরা ছিলেন মূলত ব্যবসায়ী, কিন্তু হঠাৎ এঁদের বাড়ি রাজবাড়ি হয়ে উঠল কি ভাবে? ইতিহাস বলছে গোস্বামীরা শ্রীরামপুরে স্থিতু হন শেওড়াফুলির রাজা মনোহর রায়ের অনুরোধে। সেই অর্থে শেওড়াফুলির রাজার অধীনে ছিলেন গোস্বামীরা। 

রঘুরাম গোস্বামীর সময়ে শ্রীরামপুরের গোস্বামী পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা তুঙ্গে ওঠে। 'প্রিন্স অফ মার্চেন্ট' হিসেবে বিখ্যাত রঘুরাম গোস্বামী সেই সময়ে এতটাই ধনী ছিলেন যে রঘুরাম ১২ লাখ টাকা দিয়ে ড্যানিশদের থেকে শ্রীরামপুর কিনে নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাঁধ সেঁধেছিল ইংরেজরা। শেষমেশ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তেরো লক্ষ টাকায় ড্যানিশদের থেকে শ্রীরামপুর কিনে নেয়। 

Tuesday, December 10, 2024

শ্রীরামপুর রাজবাড়ি/ গোস্বামী বাড়ি

"ধর্ম মানে আজান, ধর্ম মানে কাওয়ালি,  মাইকেল এঞ্জেলোর পেইন্টিং। কত কত ফ্রেস্কোস, কত কত মন্দিরের গায়ে অসংখ্য কারুকার্য। ধর্ম মানে বাইবেল , কোরান, গীতা, ধর্ম মানে সাহিত্য, লিটারেচার। ধর্ম মানে এক কথায় আর্ট!"

শ্রীরামপুর রাজবাড়ি নিয়ে বলার আগে গোস্বামী পরিবার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া দরকার। এর সাথে সাথে দেখে নেব গোস্বামী পুরনো বাড়ি - যেখানে 'বুড়ি দূর্গা' পূজা হয়, গোস্বামীদের রাসমঞ্চ এবং রাজা কিশোরীলাল গোস্বামীর বাড়ি। 

স্থানীয় মানুষ এই বাড়িটিকে শ্রীরামপুর রাজবাড়ি বললেও এটি আসলে গোস্বামীদের ঠাকুর দালান বাড়ি। অনেকে এটিকে গোস্বামী ম্যানসন বলেও থাকেন।  

Saturday, April 15, 2023

টাকির জমিদারির ইতিহাস

পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ সীমান্তে উত্তর ২৪ পরগণা জেলায় ইছামতী নদীর পশ্চিমতীরে অবস্থিত মফস্সলের এই ছোট শহর - টাকি ঘিরে রয়েছে বহু প্রাচীন ইতিহাস। ইছামতী ছাড়াও আরো একটি ছোট নদী প্রবাহিত হত টাকির পাশ দিয়ে। এর ফলে তৈরি হয় সরু মুখের নদীতীর বা ট্যাঁক। এই ট্যাঁক থেকেই টাকি'র নামকরণ হয় বলে মনে করা হয়। এখানে সেই অর্থে সীমান্ত বলে কিছু নেই - নদীর মাঝ বরাবর ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত বলে ধরে নেওয়া হয়। নদীর এপারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার টাকি এবং অপর প্রান্তে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার শ্রীপুর, ভাতসালা, দেভাটা গ্রাম। সুন্দরবনের গেটওয়ে হিসেবেও টাকি পরিচিত হলেও আজ কলকাতা থেকে Weekend Destination হিসেবে টাকি আলাদা করে স্বীকৃতি পেয়েছে। শুধুমাত্র ইছামতীর টানেই, বা শীতের গ্রামের আমেজ নিতে বা, দশমীর দুর্গাবিসর্জন দেখতে নয়, টাকির ইতিহাসের টানে এখন ভ্রমণপিয়াসীরা আসছেন সারা বছর ধরে। যদিও টাকির ইতিহাসের অনেককিছুই এখন অবহেলায় সময় এবং নদীর গর্ভে - যা আছে তার দরকার ঠিকঠাক রক্ষণাবেক্ষণ। 

Sunday, April 09, 2023

টাকি ভ্রমণঃ প্রকৃতি, ইছামতী নদী আর জমিদারবাড়ি

আজ থেকে ২০-২৫ বছর আগে অবধি টাকি শহরের পরিচয় ছিল শীতকালীন পিকনিক স্পট হিসেবে। আমার সেই সময়ের টাকি'র স্মৃতি হিসেবে যেটুকু মনে আছে, চওড়া ইছামতী নদী, পাশে ধানক্ষেত - ধান কেটে নেওয়ার পর ধানগাছের গোড়াটুকু পড়ে আছে, আর কিছু খেজুর গাছ, যেগুলোতে রসের হাঁড়ি ঝুলছে আর ফেরার সময় দেখেছিলাম চুপচাপ টাকি রেলস্টেশনকে। 

সেই টাকি আজ আর নেই। রিলায়েন্স ট্রেণ্ডস আর স্মার্ট পয়েন্ট খুলে গিয়েছে এখানে। চাষবাস এই শহরে আজ হয়না বললেই চলে। অবশ্য দোষই বা দেই কেন? দেশের অন্যতম প্রাচীন এই জনপদে পুরসভা গঠিত হয় ১৮৬৯ সালের ১ এপ্রিল ৪টি ওয়ার্ড নিয়ে। অধীনে ছিল সাড়ে ৪ বর্গ মাইল। ১৪ জন মনোনীত সদস্য নিয়ে গঠিত হয়েছিল টাউন কমিটি। শুরুতে পুরসভার কাজ চলত মোহিত কুণ্ডুর বাড়িতে। টাকি পুরসভার প্রথম ভারপ্রাপ্ত পুরপ্রধান সতীকান্ত মুখোপাধ্যায় এবং উপপ্রধান হয়েছিলেন জ্ঞানেন্দ্রকুমার রায়চৌধুরী। ওই সময়ে টাকির বেশির ভাগ জায়গা ছিল জঙ্গলে ভরা। একসময় বাঘের তাণ্ডবে অতিষ্ঠ টাকি টাউন কমিটি শেষমেশ বাঘ মারতে পুরস্কার ঘোষণা করে। যার নগদ মূল্য ছিল ১৬ টাকা! কে পেয়েছিলেন এই পুরষ্কার সে ইতিহাস অবশ্য সময়ের ধুলোয় চাপা পড়ে গেছে। স্বাধীনতার আগে থেকেই টাকির উন্নতি শুরু, সেই উন্নতির পিছনে অবশ্য টাকির রায়চৌধুরী জমিদারদের অবদান অনস্বীকার্য। ১৮৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত টাকি গভমেন্ট স্কুল এখানকার শিক্ষা-মনন গঠনে এক দারুণ কাজ করে চলেছে। বিভিন্ন সময়ে টাকি পুরসভায় এসেছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রসরাজ অমৃতলাল বসু, জলধর সেন প্রমুখ। বিধানচন্দ্র রায়ের আমলে একবার রাজ্যের সব মন্ত্রীদের নিয়ে ‘আম দরবার’ বসেছিল টাকিতে।

Thursday, March 23, 2023

শ্রীরামপুরঃ চাতরা সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির

''জেনেছি জেনেছি তারা
তুমি জানো ভোজের বাজি।
যে তোমায় যেভাবে ডাকেতাতে তুমি হওমা রাজি।।
মগে বলে ভরা তারাগড বলে ফিরিঙ্গি যারা
খোদা বলে ডাকে তোমায় মোগল পাঠান সৈয়দ কাজী।।

শাক্তে বলে তুমি শক্তিশিব তুমি শৈবে ভক্তি
সরি বলে সূর্য তুমি বৈরাগী কয় রাধিকাজী।।
গানপত বলে গণেশযজ্ঞ বলে তুমি ধনেশ
শিল্পী বলে বিশ্বকর্মাবদর বলে নায়ের মাঝি।।

Wednesday, March 22, 2023

শ্রীরামপুরের শীতলা পুজো ও মেলা (চাতরা শীতলাতলা ও পটুয়াপাড়া)

শ্রীরামপুরের চাতরার শীতলাপুজোও খুব বিখ্যাত। এখানে পূজিত হন শ্রীরামপুরের তিন মা - বড় মা, মেজ মা এবং ছোট মা। তিন মা-ই আসলে মা শীতলা।  

প্রায় ২০০ বছর আগে ফাল্গুন-চৈত্র মাসে বসন্ত রোগ এক সময় মহামারীর আকার ধারণ করেছিল শ্রীরামপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। স্বপ্নাদেশ পেয়ে সাধক রামদাস শুরু করেন শীতলা পুজো। প্রসন্ন হয়ে দেবী শ্রীরামপুর ও সংলগ্ন এলাকাবাসীকে রোগমুক্ত করেন। আজ ভক্তদের একাংশের কাছে তিনি শ্রীরামপুরের রানি মা। আবার কিছু ভক্তের কাছে তিনি বড় মা। ঐতিহাসিক সুধীরকুমার মিত্র মনে করেন, বাংলা সালের ১২৬০ এর দশক থেকে এখানে শীতলা দেবীর আরাধনা চলছে। বর্তমানে শীতলা এস্টেষ্ট এই মন্দির এবং পুজোর দেখভাল করে। 

Wednesday, March 08, 2023

শ্রীরামপুর - টি, সি, গোস্বামী ষ্ট্রীটের হানা হাউস

Hannah House 
38 T.C. Goswami Street
Age: 200 years+

যদি শ্রীরামপুরের শিক্ষার প্রসারে নাম আসে শ্রীরামপুর ত্রয়ী অর্থাৎ উইলিয়ম কেরি, জশুয়া মার্শম্যান এবং উইলিয়ম ওয়ার্ড, তবে নারী শিক্ষা প্রসারে যাঁর নাম অনেকেই ভুলে যাই তিনি হলেন মার্শম্যানের ধর্মপত্নী হান্না (বা হ্যানা বা হানা) মার্শম্যান (Hannah Marshman)। 

হানা মার্শম্যান (১৩ মে ১৭৬৭ - ৫ মার্চ ১৮৪৭)
© Regent's Park College, University of Oxford

১৭৬৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ মে উইল্টশায়ারে জন্ম হান্নার। বাবা জন শেফার্ড পেশায় চাষী, আর মা রাচেল। উইল্টশায়ারের ক্রেকারটন গীর্জার পাদ্রী ঠাকুরদা জন ক্লার্ক-এর মাধ্যমে ছোটবেলা থেকেই হান্নার আধ্যাত্মিক চেতনা গড়ে ওঠে। ১৭৯১ খ্রিষ্টাব্দে জশুয়া মার্শম্যানের সাথে বিবাহের তিন বছরের মাথায় ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দে পৈতৃক শহর  ছেড়ে ব্রিস্টেলের ব্রোড মীড ব্যাপিস্ট চার্চে যোগ দেন হ্যান্না মার্শম্যান। 

Monday, March 06, 2023

শ্রীরামপুর : গোলোক ধাম

Outer Courtyard of Golok Dham (Serampore) (2020)

গোলোকধাম শ্রীরামপুরের অন্যতম বিখ্যাত পুরোনো বাড়িগুলির মধ্যে একটি। ৪৩ Queen's street, বা অধুনা নেতাজি সুভাষ এভিন্যুউ-তে অবস্থিত এই বাড়িটি আসলে রায় পরিবারের বাড়ি। এই বাড়িটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন গোলোকচন্দ্র রায়। মনে করা হয় যে তিনি চৈতন্য মহাপ্রভুর একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও শিষ্য,বিখ্যাত বৈষ্ণব মাধব চন্দ্র বা মাধাই পণ্ডিতের ১৪-তম বংশধর।  

Friday, March 03, 2023

শ্রীরামপুরঃ ড্যানিশ সরকারি ভবন ও অন্যান্য



উনিশ শতকে ষাটের দশকে নাট্যকার ও কবি দীনবন্ধু মিত্র কিছুদিন শ্রীরামপুরে পােষ্টমাস্টার হয়ে ছিলেন। তাঁর 'সুরধুনী' কাব্যে তিনি এই শহর সম্পর্কে যা বর্ণনা দিয়েছেন-

Wednesday, March 01, 2023

শ্রীরামপুরঃ ইম্যাকুলেট কনশেপশন চার্চ

Immaculate Conception refers to the doctrine that God preserved the Virgin Mary from the taint of original sin from the moment she was conceived; it was defined as a dogma of the Roman Catholic Church in 1854. 


এই সুন্দর রোমান ক্যাথলিক চার্চটি 1776 সালে নির্মিত হলেও, এই গির্জার ইতিহাস আরো পুরোনো। 1764 সালে ইউরোপীয় বসতি স্থাপনকারীদের জন্য একটি ছোট চ্যাপেল তৈরি করা হয়েছিল, সেটিই পরে পুনঃগঠিত হয়ে এই ইম্যাকুলেট কনশেপশন চার্চ-এ পরিণত হয়। 

শ্রীরামপুর: মেলা বাড়ি ও ক্ষেত্রমোহন সা-এর বাড়ি

Residence of Khestra Mohan Sha


শ্রীরামপুরের অন্যতম কৃতিমান ব্যক্তি ছিলেন ক্ষেত্রমোহন সা' (১৮৪১-১৯১৪)। শ্রীরামপুর স্টেশনের কাছেই ক্ষেত্রমোহন সা' স্ট্রিটে অবস্থিত তাঁর বসতবাটি এবং মেলাবাড়ি। 
ক্ষেত্রমোহন সা' জন্মেছিলেন ১৮৪১ সালে, বিহারে। ইষ্ট ইণ্ডিয়া রেলওয়ে কোম্পানির ঠিকাদার ছিলেন তিনি, সেই সুবাদেই শ্রীরামপুরে এসে বসবাস শুরু করেন। আজ যেখানে কে.এম. শাহ রোড, সেটিই আগে পরিচিত ছিল অক্সফোর্ড স্ট্রীস্ট নামে। এখানেই আছে ক্ষেত্রমোহন সাহের বসতবাড়িটি। পরবর্তীকালে ক্ষেত্রমোহন সাহ পাটের ব্যবসায় নামেন এবং প্রভূত অর্থ উপার্জন করেন। এই অর্জিত পয়সাতেই তিনি শুরু করেছিলেন বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজকর্ম। 

শ্রীরামপুর : চাতরার দোল মন্দির / কাশীশ্বর পীঠ

গৌরাঙ্গ মন্দির, কাশীশ্বর পীঠ বা কাশীশ্বর পণ্ডিতের শ্রীপাট, দোলতলা মন্দির নামেও এই মন্দিরটি পরিচিত। নামেই পরিষ্কার যে এই মন্দিরটি কাশীশ্বর পণ্ডিত দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। 

ফ্রেডরিকনগরের দক্ষিণে মাহেশ ও বল্লভপুর আর উত্তরে চাতরা - বৈষ্ণবদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখতে হবে বল্লভপুরের রাধাবল্লভ মন্দিরের স্থাপনা এই কাশীশ্বর পণ্ডিতের ভাগ্নে রুদ্ররামের হাতে৷ 

এই মন্দিরে দোল পার্বণ খুব ধুমধাম করে পালন হয়। তাই এর নাম দোল মন্দির বা দোলতলা মন্দির। উঁচু ভিত্তিবেদীর উপরে প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণমুখী সমতল ছাদ বিশিষ্ট 'কাশীশ্বর পীঠ' মন্দিরের ছাদের উপরে পূর্ব-পশ্চিমে পাশাপাশি স্থাপিত তিনটি পিরামিড আকৃতির চূড়া দেখে মনে হয়, এখানে বাস্তুশাস্ত্রের ভাষায় 'ত্রৈকুটক' রীতিতে নির্মিত পাশাপাশি ও পরস্পর-সংলগ্ন তিনটি মন্দির রয়েছে। এদের মধ্যে মাঝখানের মূল মন্দিরের চূড়াটি অপেক্ষাকৃত উঁচু। মূল মন্দিরের সামনে দরজা এবং পিছনে জানালা। দুই পাশের মন্দিরগুলির সামনে এবং পাশে দুইটি করে দরজা। মূল মন্দির থেকে পাশের মন্দিরগুলিতে যাওয়ার জন্য ভিতরে আরও একটি করে দরজা আছে। তিনটি মন্দিরের সামনে একটি বারান্দা আছে, যা অনেক পরে নির্মিত হয়েছে।

Tuesday, February 28, 2023

শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতাল

ইউরোপীয়দের আসার আগে গ্রামগঞ্জে তখন কবিরাজি চিকিতসাই ভরসা ছিল। শ্রীরামপুরও তখন এই কবিরাজি চিকিতসার ভরসাতেই চলত। এই কবিরাজি চিকিতসকরা থাকতেন কাছেই, যার নাম বৈদ্যবাটি। মুসলিমদের জন্য ছিলো হাকিমী চিকিৎসা। এছাড়া তন্ত্র, যাদু, তাবিজ, কবজ, ঝাড়-ফুক, তুকতাক, জল পোড়া, তেল পোড়া এসবতো ছিলোই। উন্নত বৈজ্ঞানিক  চিকিৎসা পদ্ধতির নাম গন্ধও তখন ছিলো না। দিনেমার সরকার ও শ্রীরামপুর মিশনারীদের হাত ধরেই শ্রীরামপুরে পশ্চিমী অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা শুরু হয়।  

১৮৩৪-৩৫ সালে শ্রীরামপুর তথা ফ্রেডরিকনগরের দিনেমার গভর্নর জে. রেখলিং, ডঃ মার্শম্যান ও চিকিৎসক ডঃ ডয়েটের বিশেষ উদ্যোগে এক সভায় শহরের মাননীয় ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে এক দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র চালু করার সিদ্ধান্ত নেন। 

শ্রীরামপুর: ড্যানিশ চার্চ - সেন্ট ওলাভস চার্চ


শ্রীরামপুরে ড্যানিশ ঔপনিবেশিক ইতিহাসের 
গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক স্মৃতিস্তম্ভগুলির মধ্যে একটি হল এই ড্যানিশ চার্চ - যার পোশাকি নাম সেন্ট ওলাভ'স চার্চ। পাঁচু গোপাল ভাদুড়ী সরনীতে অবস্থিত এই চার্চটির নামকরণ হয় নরওয়ের ভাইকিং রাজা এবং পরে 'National Saint' সেণ্ট ওলাভ-এর নামে। 

১৭৫৫ সালে ড্যানিশরা শ্রীরামপুরে (বা ফ্রেডরিকনগর) উপনিবেশ স্থাপন করার পরে এখানে ধীরে ধীরে ড্যানিশ জনসংখ্যা বাড়তে থাকে। কাজেই দরকার হয়ে পড়ে একটি উপাসনাস্থলের। ১৭৭৬ সালে ফ্রেডরিকগঞ্জের গভর্নর নিযুক্ত হলেন কর্নেল ওলি'বি। ডেনমার্ক থেকে চাঁদা তুলে মোটামুটি ১৮০০ খ্রীস্টাব্দে প্রোটেস্ট্যান্ট নাগরিকদের প্রার্থনাস্থল স্থাপনের জন্য লুথারিয়ন গির্জার কাজ শুরু হয় শ্রীরামপুরের তৎকালীন গভর্নর ওলি'বি-র সময়।

শ্রীরামপুর: জেল/উপসংশোধনাগার

আজকে ঋষি বঙ্কিম সরণীর উপর অবস্থিত শ্রীরামপুর জেলটি ১৮০৩ সালে ড্যানিশ প্রশাসন তৈরি করেন। ভারতে এটি ছিল ড্যানিশদের অধীনস্থ দ্বিতীয় কারাগার। ড্যানিশ উপনিবেশ শ্রীরামপুরে খুব বিশাল বড় কিছু না হলেও আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য একটি কোর্টঘর এবং জেল বা কাছারীর (catcherie/cutchery) খুবই দরকার ছিল। বলে রাখা ভালো এই Catcherie শব্দটি এসেছে হিন্দী/বাংলার কাছারী শব্দ থেকে। 

Sunday, February 26, 2023

শ্রীরামপুরঃ ড্যানিশ কবরখানা

Entrance of Danish Cemetery (2024)

যদিও শ্রীরামপুরে ড্যানিশ উপনিবেশটি ছিল ছোট, কিন্তু খ্রীষ্টান কবরখানার প্রয়োজন হয়েছিল তাড়াতাড়িই। কারণ অনেকটা সমুদ্রপথ পেরিয়ে ভারতে এসে অনেক ইউরোপীয়ানরাই অসুস্থ হয়ে পড়তেন। তারপর ছিল ট্রপিক্যাল ফিভার এবং গরম - তার ধকল অনেকেই নিতে পারতেন না। ফলে মৃত্যুর হার ছিল বেশ বেশিই। ফলে নিজেদের দরকারেই ড্যানিশ কর্তৃপক্ষ এই কবরখানাটি গড়ে তোলেন।  

শ্রীরামপুরঃ মিশন সিমেট্রি


অনেকেই একে 'William Carey Graveyard' বলে নোট করলেও এখানে কেরীসাহেব ছাড়াও অনন্তশয্যায় শায়িত আছেন মার্শম্যান এবং ওয়ার্ডসাহেব এবং তাঁদের পরিবারের মানুষরা। তাই 'মিশন সিমেট্রি' (Mission Cemetry) বলাটাই ঠিক হবে।   

এখানে প্রথম সমাধিত কে ছিলেন বলা মুশকিল - কারণ এখানে বেশ কিছু সমাধি/কবর আছে যেগুলির অবস্থা খুব খারাপ। 

শ্রীরামপুরঃ শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দ জীউর মন্দির

শ্রীরামপুরের শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দ জীউর মন্দিরটি ৮৩, ঋষি বঙ্কিম সরণিতে অবস্থিত। এই মন্দিরের ঠিক পাশেই নিউগেট এ্যাথলেটিক ক্লাবের মাঠ।

সামনে নাটমন্দির সমেত এই মন্দিরটি একটি ছিমছাম মন্দির - তিনরত্ন চূড়া বিশিষ্ট। 

এই মন্দিরের নাটমন্দিরটি ১৯৯০সালে ৬নং আখড়া বাটি লেন-বাসী শ্রী শীতল কুণ্ডু, শ্রী বিশ্বনাথ কুণ্ডু এবং ২৪ নং রাজা লেন, কলিকাতা-৯ বাসী শ্রীমতি মেনকা পাল তৈরি করে দেন।  

শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দ জীউর মন্দির

এই মন্দিরের পিছনে একটি দোতলা বাড়ি আছে, যেটি সম্ভবত মন্দিরের ভাড়ার ঘর এবং অতিথিশালা ছিল। এই বাড়িটির অবস্থা এখন খুবই খারাপ। 

শ্রীরামপুরঃ রাম-সীতা মন্দির

ট্রেনের নিত্যযাত্রীরা মজা করে বলে থাকেন - 'স্যার আই এম পুওর' - কালা নেটিভের বলা এই ইংরিজি বাক্য থেকেই নাকি এসেছে শ্রীরামপুরের নাম। যদিও সেটা সত্যি নয়। শেওড়াফুলীর রাজা রাজচন্দ্র রায়ের প্রতিষ্ঠিত রাম-সীতার মন্দির থেকেই এই অঞ্চলের নামকরণ হয় শ্রীরামপুর। 

১৭৫৩ সাল (৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১১৬০ বঙ্গাব্দ) নাগাদ মনোহর চন্দ্রের পুত্র রাজা রাজচন্দ্র রায় শ্রীপুর গ্রামে বিষ্ণু-অবতার রামচন্দ্রের মন্দির স্থাপন করেন এবং এই মন্দিরের সেবার জন্য শ্রীপুর, গোপীনাথপুর ও মনোহরপুর নামক ৩টি মৌজা দেবোত্তর করে দেন। এভাবেই ‘শ্রীপুর’, ‘শ্রীরাম’ ইত্যাদি নাম থেকে ‘শ্রীরামপুর’ নামটির উৎপত্তি। 

Friday, February 24, 2023

শ্রীরামপুর: ইউনিক লজ

বর্ধমান-হুগলীর সীমান্তের দেবীপুর গ্রামের ভট্টাচার্য পরিবার ১৮০০ শতকের শুরুতে যশোরে চলে এলেও ১৮৬০ সালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কথামত কালীনাথ ভট্টাচার্য শ্রীরামপুরে এসে বসবাস শুরু করেন। কালীনাথ ছিলেন সংস্কৃতের পণ্ডিত - এখানে এসে দে পরিবারের শিশুদের শিক্ষক হিসাবে কাজ শুরু করেন। সেই শুরু ভট্টাচার্য পরিবারের শ্রীরামপুরের দে স্ট্রীটে থাকা। কালীনাথের ছেলে দূর্গাপ্রসন্ন (স্থানীয়দের কাছে পাঁচুবাবু বলে পরিচিত) চিকিৎসক হতে চাইলেও পরে পেশা হিসেবে বেছে নেন বাড়ি তৈরির কাজকে। ব্রিটিশদের তত্ত্বাবধানে তৈরি করতে থাকেন একের পর এক জুট মিল, সরকারি-বেসরকারি বাড়ি।

অর্থাজনের সাথে সাথে তিনি ছিলেন শৌখিন মানুষ। কলকাতার রাজেন্দ্র মল্লিকের মার্বেল প্যালেস ও চিড়িয়াখানার অনুকরণে দূর্গাপ্রসন্ন তৈরি করেন এই ইউনিক লজ এবং ডগ কেনেল। মূল দরজার বাইরে আছে দুটি সিংহ মূর্তি - এই জন্য ২১ নম্বর দে স্ট্রিটের এই বাড়িটি ‘সিংহ বাড়ি’ নামে পরিচিত।