আজ থেকে ২০-২৫ বছর আগে অবধি টাকি শহরের পরিচয় ছিল শীতকালীন পিকনিক স্পট হিসেবে। আমার সেই সময়ের টাকি'র স্মৃতি হিসেবে যেটুকু মনে আছে, চওড়া ইছামতী নদী, পাশে ধানক্ষেত - ধান কেটে নেওয়ার পর ধানগাছের গোড়াটুকু পড়ে আছে, আর কিছু খেজুর গাছ, যেগুলোতে রসের হাঁড়ি ঝুলছে আর ফেরার সময় দেখেছিলাম চুপচাপ টাকি রেলস্টেশনকে।
সেই টাকি আজ আর নেই। রিলায়েন্স ট্রেণ্ডস আর স্মার্ট পয়েন্ট খুলে গিয়েছে এখানে। চাষবাস এই শহরে আজ হয়না বললেই চলে। অবশ্য দোষই বা দেই কেন? দেশের অন্যতম প্রাচীন এই জনপদে পুরসভা গঠিত হয় ১৮৬৯ সালের ১ এপ্রিল ৪টি ওয়ার্ড নিয়ে। অধীনে ছিল সাড়ে ৪ বর্গ মাইল। ১৪ জন মনোনীত সদস্য নিয়ে গঠিত হয়েছিল টাউন কমিটি। শুরুতে পুরসভার কাজ চলত মোহিত কুণ্ডুর বাড়িতে। টাকি পুরসভার প্রথম ভারপ্রাপ্ত পুরপ্রধান সতীকান্ত মুখোপাধ্যায় এবং উপপ্রধান হয়েছিলেন জ্ঞানেন্দ্রকুমার রায়চৌধুরী। ওই সময়ে টাকির বেশির ভাগ জায়গা ছিল জঙ্গলে ভরা। একসময় বাঘের তাণ্ডবে অতিষ্ঠ টাকি টাউন কমিটি শেষমেশ বাঘ মারতে পুরস্কার ঘোষণা করে। যার নগদ মূল্য ছিল ১৬ টাকা! কে পেয়েছিলেন এই পুরষ্কার সে ইতিহাস অবশ্য সময়ের ধুলোয় চাপা পড়ে গেছে। স্বাধীনতার আগে থেকেই টাকির উন্নতি শুরু, সেই উন্নতির পিছনে অবশ্য টাকির রায়চৌধুরী জমিদারদের অবদান অনস্বীকার্য। ১৮৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত টাকি গভমেন্ট স্কুল এখানকার শিক্ষা-মনন গঠনে এক দারুণ কাজ করে চলেছে। বিভিন্ন সময়ে টাকি পুরসভায় এসেছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রসরাজ অমৃতলাল বসু, জলধর সেন প্রমুখ। বিধানচন্দ্র রায়ের আমলে একবার রাজ্যের সব মন্ত্রীদের নিয়ে ‘আম দরবার’ বসেছিল টাকিতে।