Pages

Sunday, April 09, 2023

টাকি ভ্রমণঃ প্রকৃতি, ইছামতী নদী আর জমিদারবাড়ি

আজ থেকে ২০-২৫ বছর আগে অবধি টাকি শহরের পরিচয় ছিল শীতকালীন পিকনিক স্পট হিসেবে। আমার সেই সময়ের টাকি'র স্মৃতি হিসেবে যেটুকু মনে আছে, চওড়া ইছামতী নদী, পাশে ধানক্ষেত - ধান কেটে নেওয়ার পর ধানগাছের গোড়াটুকু পড়ে আছে, আর কিছু খেজুর গাছ, যেগুলোতে রসের হাঁড়ি ঝুলছে আর ফেরার সময় দেখেছিলাম চুপচাপ টাকি রেলস্টেশনকে। 

সেই টাকি আজ আর নেই। রিলায়েন্স ট্রেণ্ডস আর স্মার্ট পয়েন্ট খুলে গিয়েছে এখানে। চাষবাস এই শহরে আজ হয়না বললেই চলে। অবশ্য দোষই বা দেই কেন? দেশের অন্যতম প্রাচীন এই জনপদে পুরসভা গঠিত হয় ১৮৬৯ সালের ১ এপ্রিল ৪টি ওয়ার্ড নিয়ে। অধীনে ছিল সাড়ে ৪ বর্গ মাইল। ১৪ জন মনোনীত সদস্য নিয়ে গঠিত হয়েছিল টাউন কমিটি। শুরুতে পুরসভার কাজ চলত মোহিত কুণ্ডুর বাড়িতে। টাকি পুরসভার প্রথম ভারপ্রাপ্ত পুরপ্রধান সতীকান্ত মুখোপাধ্যায় এবং উপপ্রধান হয়েছিলেন জ্ঞানেন্দ্রকুমার রায়চৌধুরী। ওই সময়ে টাকির বেশির ভাগ জায়গা ছিল জঙ্গলে ভরা। একসময় বাঘের তাণ্ডবে অতিষ্ঠ টাকি টাউন কমিটি শেষমেশ বাঘ মারতে পুরস্কার ঘোষণা করে। যার নগদ মূল্য ছিল ১৬ টাকা! কে পেয়েছিলেন এই পুরষ্কার সে ইতিহাস অবশ্য সময়ের ধুলোয় চাপা পড়ে গেছে। স্বাধীনতার আগে থেকেই টাকির উন্নতি শুরু, সেই উন্নতির পিছনে অবশ্য টাকির রায়চৌধুরী জমিদারদের অবদান অনস্বীকার্য। ১৮৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত টাকি গভমেন্ট স্কুল এখানকার শিক্ষা-মনন গঠনে এক দারুণ কাজ করে চলেছে। বিভিন্ন সময়ে টাকি পুরসভায় এসেছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রসরাজ অমৃতলাল বসু, জলধর সেন প্রমুখ। বিধানচন্দ্র রায়ের আমলে একবার রাজ্যের সব মন্ত্রীদের নিয়ে ‘আম দরবার’ বসেছিল টাকিতে।

পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ সীমান্তে উত্তর ২৪ পরগণা জেলায় ইছামতী নদীর পশ্চিমতীরে অবস্থিত মফস্সলের এই ছোট শহর - টাকি ঘিরে রয়েছে বহু প্রাচীন ইতিহাস। ইছামতী ছাড়াও আরো একটি ছোট নদী প্রবাহিত হত টাকির পাশ দিয়ে। এর ফলে তৈরি হয় সরু মুখের নদীতীর বা ট্যাঁক। এই ট্যাঁক থেকেই টাকি'র নামকরণ হয় বলে মনে করা হয়। এখানে সেই অর্থে সীমান্ত বলে কিছু নেই - নদীর মাঝ বরাবর ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত বলে ধরে নেওয়া হয়। নদীর এপারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার টাকি এবং অপর প্রান্তে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার শ্রীপুর, ভাতসালা, দেভাটা গ্রাম। সুন্দরবনের গেটওয়ে হিসেবেও টাকি পরিচিত হলেও আজ কলকাতা থেকে Weekend Destination হিসেবে টাকি আলাদা করে স্বীকৃতি পেয়েছে। শুধুমাত্র ইছামতীর টানেই, বা শীতের গ্রামের আমেজ নিতে বা, দশমীর দূর্গাবিসর্জন দেখতে নয়, টাকির ইতিহাসের টানে এখন ভ্রমণপিয়াসীরা আসছেন সারা বছর ধরে। যদিও টাকির ইতিহাসের অনেককিছুই এখন নদীর গর্ভে - যা আছে তাও অনেক, শুধু দরকার ঠিকঠাক রক্ষণাবেক্ষণ। 

টাকির বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়ানোর জন্য সবথেকে ভালো উপায় হল টোটো। টোটোয় চড়ে তিনটি জোনে ভাগ করে টাকির সাইটসিইং করা যায়। শহরের বিভিন্ন জায়গায় হোর্ডিং টাঙ্গানো আছে - প্রতি জোনে টোটো ভাড়া ৩০০ টাকা করে। 

ZONE 1

ভারতীয় আর্মির প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল শঙ্কর রায়চৌধুরীর বাড়ি
ব্রিটিশ আমলের ঘোরানো নলকূপ
কৌশিক গাঙ্গুলীর বিসর্জন সিনেমার স্যুটিং স্পট
কিশোরনগর জালালপুরের শ্রী শ্রী রাধা নন্দদুলাল জীউ মন্দির
গোলপাতার জঙ্গল/মিনি সুন্দরবন

ZONE 2

টাকি জোড়া শিবমন্দির
ঘোষ বাড়ির দূর্গা দালান
টাকি প্রতীক সৈকত 
টাকি ইকো পার্ক
ত্রিশক্তি কালী মন্দির

ZONE 3

টাকি কুলেশ্বরী কালী মন্দির /টাকি কালীবাড়ি 
জগজ্জনী মন্দির 
টাকি রাজবাড়ী (পুবের বাড়ী) 
কৌশিক গাঙ্গুলীর বিসর্জন সিনেমার স্যুটিং স্পট
টাকি রামকৃষ্ণ মিশন 

যদি টাকিতে রাত্রিবাস করেন, সন্ধ্যেবেলায় রাজবাড়ি ঘাট থেকে হেঁটে হেঁটে ঘুরে বেড়ানো যায় ইছামতীর ধার দিয়ে। সুন্দর আলো দিয়ে সজ্জিত রাস্তা বরাবর হাঁটতে ভালোই লাগবে। নদীর ধারে বসার জায়গাও আছে - বসে বসে নদীর হাওয়া খেতে ভালোই লাগে। সন্ধ্যেবেলায় নদীর ধারে বসে আড্ডা মারতে বসলে একটু চা, সাথে টাও লাগে। এখানে বেশ কিছু দোকানও আছে স্ট্রীট ফুডের - পেয়ে যাবেন ফুচকা, চপ, ঝালমুড়ি, চাট, রোল, চাউমিন ইত্যাদি। 

এছাড়া আছে ইছামতী নদীতে নৌকাভ্রমণ - ঘুরে আসা যায় ইছামতী-বিদ্যাধরী-কালিন্দী নদীর ত্রিমোহনা এবং মাছরাঙা দ্বীপ, দেখতে পাবেন বাংলাদেশের রূপসী ম্যানগ্রোভ অরণ্য। আম্ফানের পরে সেই দ্বীপের অনেক অংশ এখন নদীর গহ্বরে। টাকি থেকে অনেকেই এখানে এসে পিকনিক করতেন, সে সব এখন সবই বন্ধ। 

অনেকে অবশ্য হাসনাবাদ এসেও নৌকা চড়েন। হাসনাবাদ আর ওপারে পার-হাসনাবাদের মধ্যে ২০১৮ সাল নাগাদ বনবিবি সেতু চালু হয়। হাসনাবাদ থেকে নৌকাভ্রমণ খরচায় একটু হলেও কম পড়ে। 

বনবিবি সেতু

যদি গাড়ি করে টাকি আসেন, তাহলে ঘুরে নিতে পারেন - কচুয়া/চাকলা (লোকনাথ বাবার মন্দির), বেড়াচাঁপা (খনা মিহিরের ঢিপি, চন্দ্রকেতুগড়, দূর্গের ধ্বংসাবশেষ), ধান্যকুড়িয়ার জমিদারবাড়িগুলি (গায়েন, বল্লভ এবং সাউদের বাড়ি), গোবরডাঙ্গার জমিদারবাড়ি, কালীবাড়ি, এবং নতুন ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র - বাঁওড় বিতান (9830426600)। 

হাসনাবাদের কাছেই বিদ্যাধরী নদীর তীর ঘেঁষে শুলকুনি গ্রামের 'খোলা হাওয়া রিসর্ট' আরেকটি নতুন ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র। টাকিতে অনেকবার এসে থাকলে এই রিসর্টটি পরেরবার যেতেই পারেন। অনেকটা জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা 'খোলা হাওয়া' রিসর্টটির চারদিক নানা রকম গাছগাছালিতে পূর্ণ, মাঝখানে একটি পুকুর। একটি মেন বিল্ডিং ছাড়াও অনেকগুলি কটেজ নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে রিসর্টে থাকার ব্যবস্থা। যোগাযোগ:  99339684236



ভারতীয় আর্মির প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল শঙ্কর রায়চৌধুরীর বাড়ি, ঠাকুর দালান, 
পাশে তাঁদের প্রতিষ্ঠা করা লাইব্রেরী, 
পাশেই গয়নার বাক্স সিনেমার স্যুটিং স্পট

শঙ্কর রায়চৌধুরীর আদিবাড়ির দূর্গা দালান 

স্বাধীনতার আগে থেকেই যশাের জেলায় রায়চৌধুরী বাড়ির দুর্গাপুজো শুরু হয়েছিল, কিন্তু ১৯৪৭ এ স্বাধীনতার পর টাকি-সৈয়দপুরের এই বাড়িটির ঠাকুর দালানেই পুজো স্থানান্তরিত হয়।  এই বাড়িটি ছিল আসলে শঙ্করবাবুর (জন্মঃ সেপ্টেম্বর ৬, ১৯৩৭) মামার বাড়ি। এখানেই তিনি পড়াশুনো করে পরে আর্মিতে নিযুক্ত হন। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৭ অবধি তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর সেনাধ্যক্ষ ছিলেন। 

ভাদ্র নবমীর দিন থেকে প্রতিদিন দুবেলা ঘট পুজো করা হয়। আর সেখান থেকে দেবীর আগমন শুরু হয় রায়চৌধুরীর বাড়ির। বিচুলি জড়ানো, দেবীর মাটি লাগানোর থেকে রং লাগানো পর্যন্ত মূর্তি ঢাকা থাকবে। পঞ্চমীর দিন এই দুর্গা ঠাকুর পুরোপুরি খুলে দেওয়া হবে, তারপরে পুজো শুরু হবে এই রীতিনীতি বংশ-পরম্পরা আজও বয়ে নিয়ে চলেছে। একসময় ছাগল বলি হতো এখন তা বন্ধ, এখন দেওয়া হয় কুমড়ো বলি । 

গয়নার বাক্স সিনেমার শুটিং স্পট

গয়নার বাক্স সিনেমার শুটিং স্পট

ব্রিটিশ আমলের ঘোরানো নলকূপ

শ্রীমতী স্বর্ণলতা বসু তাঁর প্রয়াত স্বামী উপেন্দ্র নাথ বসুর (জন্ম আশ্বিন ১২৮০ সাল; মৃত্যু চৈত্র ১২৯৯ সাল) স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই নলকূপ স্থাপন করেন। স্থাপন কাল - ১ লা বৈশাখ, ১৩৩৮।  


সময়ের সাথে সাথে এই জলের ট্যাঙ্ক সমেত দোতলা নির্মাণটি আজ ভগ্নপ্রায়। সেই সময়ের ইঞ্জিনিয়ারিং-এর একটি উদাহরণ হিসেবে পথের ধারে এই নির্মাণটি আজও দাঁড়িয়ে আছে। 

বিসর্জন সিনেমার সুটিং স্পট 


কিশোরনগর জালালপুরের শ্রী শ্রী রাধা নন্দদুলাল জীউ মন্দির (স্থাপিত ১২০২ সাল)


আজকের নতুন মন্দিরটি অনিল কুমার দাশ তাঁর প্রয়াৎ পিতা রামকৃষ্ণ দাশ এবং মাতা রাজলক্ষ্মী দাশের স্মৃতির উদ্দেশ্যে স্থাপন করেন। সময়কাল ৩০শে বৈশাখ, অক্ষয় তৃতীয়া, বাংলা ১৩৮২ সাল (১৩ই মে, ১৯৭৫)। স্থানীয়রা অনেকেই এই মন্দিরকে অন্নকূট মন্দির বলে থাকেন কারণ এই মন্দিরে অন্নকূট উৎসব অত্যন্ত ধুমধাম করে পালিত হয়। ঐতিহাসিক গুরুত্ব থাকলেও মন্দিরটি স্থাপত্যগত ভাবে আহামরি কিছু নয়। 

এই মন্দিরের ঠিক সামনে একটি গ্রামীণ বাজার আছে, নাম নন্দদুলাল বিপণ্ন কেন্দ্র। 

গোলপাতার জঙ্গল/মিনি সুন্দরবন

গোলপাতার জঙ্গলে যাওয়ার পথে - শীতে এখানেই সক্কাল সক্কাল পাবেন খেজুরের রস

অনেকেই বলেন মিনি সুন্দরবন-ই টাকির প্রধান টুরিস্ট আকর্ষণ। সুন্দরী,গড়ান, গেহয়া, কেওড়া, হোগলা, গোল পাতা গাছের ম্যানগ্রোভ জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে canopy walk করে চলে আসবেন একদম ইছামতীর ধারে এবং ওয়াচ টাওয়ারে। এখানে নদী অনেক সরু। এখানে আসতে হলে সচিত্র পরিচয়পত্র বিএসএফ ক্যাম্পে জমা করে ভ্যানে করে জনপ্রতি ১০টাকা দিয়ে চলে আসুন গোলপাতা জঙ্গলে। প্রবেশমূল্য ১০টাকা। এই জঙ্গলটি টাকি পুরসভা দ্বারা পরিচর্যিত। শীতকালে এখানে অনেক রকম পাখি দেখতে পাবেন। দেশী পাখিদের মধ্যে হরিয়াল, মাছরাঙা, ফিঙে, চিল, পেঁচা, কাদাখোঁচা, বক, শামুকখোল, হাঁসপাখি, শালিক, কোকিল, পানকৌড়ি, মদনটাক, ঘুঘু ইত্যাদির দেখা পাওয়া সম্ভব। তবে বনপ্রাণ সংরক্ষণ-এর আইন অনুসারে এই সব পাখি ধরা, মারা, পোষা, ক্রয় ও বিক্রয় এবং এদের ডিম বা বাসস্থানের ক্ষতি করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। 

টাকি ভ্রমণের ক্ষেত্রে এই জোন ১ কে রাখুন সকালের দিকে। গরমকাল তো বটেই শীতকালেও সকালেই এই মিনি সুন্দরবন দেখতে ভালো লাগে। শীতের সময় দেখা পাবেন পরিযায়ী পাখিদের।


টাকি জোড়া শিবমন্দির (অনুমানিক ৪০০ বছরের বেশি পুরোনো)



বর্তমান টাকি থেকে উত্তরপল্লী-সৈয়দপুর গামী রাস্তায় যেতে চোখে পড়ে এই জোড়া শিবের মন্দির। আজকের টাকির জোড়া শিব মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন গোপীনাথ । তার গুরুদেব হরিরাম বিদ্যাবাগীশ কে বাজিতপুর (অধুনা ঢাকা, বাংলাদেশ এর অন্তর্ভূক্ত) থেকে টাকিতে বসবাসের জন্য গৃহ নির্মাণ করে দেন এবং গুরুদক্ষিণা হিসেবে গুরুগৃহের সামনে ১২০৮ বঙ্গাব্দে আশ্বিন মাসে (১৮০১ সালে) দুটি শিবলিঙ্গ সহ মন্দির প্রতিষ্ঠা ও পুষ্করিণী খনন করেন। পরবর্তীকালে এই মন্দিরদুটির সংস্কার করে স্থানীয় পুরসভা। দিনের বেলা তো বটেই রাতেও এই মন্দির দুটির আলোকসজ্জা বেশ আকর্ষণীয়। আর পুকুরটির বিস্তার যেন চোখের আরাম। 


৪০০ বছরের পুরোনো দূর্গা দালান (ঘোষ বাড়ি, ঘোষবাবু পাড়া)


ঘোষবাড়ির দূর্গাপুজোই এখন ঘোষবাড়ির একমাত্র পরিচয় কিন্তু এঁরাও ছিলেন বর্ধিষ্ণূ টাকির অংশ। 
মনে করা হয় ঘোষেরা এই এলাকায় রায়চৌধুরী জমিদাররা আসার অনেক আগে থেকেই এলাকার সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিত্ব হিসাবে পরিচিত ছিলেন। প্রায় ৩০০ বছর আগে হরিনারায়ণ ঘোষ এই পুজোর সূচনা করেন।  হরিনারায়ণ ঘোষ ছিলেন নবাব সিরাজউদ্দৌলার (মনসদে ১৭৫৬-১৭৫৭) জজ বা দেওয়ান। পলাশী যুদ্ধের পর হরিনারায়ণ লর্ড হার্ডিঞ্জ (কার্যক্রম ১৭৭৩-১৭৮৫) ও লর্ড ডালহৌসির আমলে চব্বিশ পরগনা জেলার 'সদর আমিন আলা' পদে নিযুক্ত হন এবং কর্মদক্ষতার গুনে ডালহৌসি কর্তৃক 'রায়বাহাদুর' আখ্যায় ভূষিত হন। সেইভাবে দেখলে ঘোষবাবুর পুজো এখনো ৩০০ বছর ছুঁতে পারেনি।

ঘোষবাড়িতে পরবর্তীকালে এক বছর অন্তর শাক্ত মতে পাঁঠা বলি দিয়ে পুজো হত। কুমারী পুজো ঘোষদের দুর্গাপুজোর সাথে অঙ্গাঙ্গী ছিল। এই পুজোয় কোন ভোগ রান্না হত না - দেবীকে নিবেদন করা হয় কাঁচা খাদ্যদ্রব্য। 

পরে এই বংশের মতিলাল ঘোষ বৈষ্ণব ধর্ম নিলে বৈষ্ণব মত অনুযায়ী আখ ও চালকুমড়ো বলি শুরু হয়। সেই প্রথা আজও চালু রয়েছে। সাহসী মতিলাল লাঠি খেলায় সিদ্ধহস্ত ছিলেন। একবার ডাকাতদের লড়াইয়ে হারিয়ে ৬-৭ জন ডাকাতকে বেঁধে টাকিতে নিয়ে আসেন তিনি। তখন থেকেই প্রবাদ চালু হয় "টাকির লাঠি, সাতক্ষীরার মাটি ও গোবরডাঙ্গার হাতি"।

সেসময়ে ঘোষদের বাড়িতে পুরসভার এক অস্থায়ী কার্যালয় ছিল। এখানে ঘোষদের আমন্ত্রণে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু একবার এসেওছিলেন। 

আজ ঘোষেদের সেই পুরোনো দূর্গাদালানের খিলানে খিলানে অবহেলা ও অযত্নের ছোঁয়া স্পষ্ট। পলেস্তারা খসা দেওয়াল আর ভেঙ্গে পড়া ছাদ নিয়ে এই ঠাকুরদালান অনেক ইতিহাসের স্মৃতি নিয়ে দাড়িয়ে আছে। এই ঘোষবাবু পাড়ার অনেকটাই ছিল ঘোষেদের জমিদার বাড়ি - এখন সেই জমির বেশিরভাগটাই বিক্রি হয়ে গেছে। শোনা যায় এই দূর্গাদালানের তলায় সুড়ঙ্গ আছে, যেগুলি দিয়ে বাংলাদেশ যাওয়া যেত। এখন এখানে ঢুকতে ১০টাকার প্রবেশমূল্য লাগে। 


টাকি প্রতীক সৈকত ও টাকি ইকো পার্ক
টাকি প্রতীক সৈকত আসলে টাকির একটি পিকনিক স্পট। নদীর ধারে বেশ সুন্দর এই জায়গাটিতে বসার ব্যবস্থা আছে। কিছু দূরেই আছে টাকি ইকো পার্ক - আসলে এটি একটি রিসর্ট - থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। সাথে বোটিং করার জন্য সরোবর, খাঁচায় কিছু পাখি আর রংবেরঙের মাছের অ্যাকোয়ারিয়াম। সাধারণ পযর্টকরাও সামান্য ফি দিয়ে এই ইকো পার্ক ঘুরে দেখতে পারেন। 

ত্রিশক্তি কালী মন্দির 
কূলেশ্বরী কালী মন্দিরের পুরোহিত ছিলেন সন্ন্যাসী সর্বানন্দ গিরি মহারাজ। তাঁর সাংসারিক নাম সনৎ কুমার চক্রবর্তী। ২০০৫ সালে এলাহাবাদ কুম্ভে সন্ন্যাসদীক্ষা নিয়ে তিনি হলেন সর্বানন্দ গিরি মহারাজ।  তিনি টাকি মা কূলেশ্বরী সেবাশ্রম সংঘ স্থাপন করেন এবং ত্রিশক্তি মন্দির স্থাপন করেন। এই মন্দিরে মা কালিকা, মা তারা এবং মা বগলার মূর্তি স্থাপিত আছে এবং নিত্যপুজো হয়। পরবর্তীকালে মহারাজের দেহত্যাগের পর সমাধিস্থলও এই স্থানে। পাশে একটি শিব মন্দিরও আছে। 


টাকি কুলেশ্বরী কালী মন্দির  

টাকি কালীবাড়ির ইতিহাস অনেক পুরোনো, তার ফলে এর ইতিহাস লোকমুখে লোককথায় পরিণত হয়েছে। ১৬০৩ - ১৬০৪ সাল নাগাদ প্রতাপাদিত্যকে হারিয়ে টাকির দখল নিলেন মানসিংহ। তিনি ইছামতী নদীর তীরে প্রথমবার কালীপুজো করেন। পুজো সম্পন্ন হবার পর খুব স্বাভাবিক ভাবেই পুজোর সামগ্রী, মায়ের প্রতিমা নদীতে বিসর্জন করা হয়। কিন্তু দেখা যায় যে সবকিছু নদীবক্ষে বিসর্জিত হলেও পুজোর ঘটটি নদীতে ভাসতে থাকে। অনেকে বলেন কূলেশ্বরী কালীর আদি মন্দির হাসনাবাদের রজিপুরের কালীতলায় ছিল এবং এখানেই মানসিংহ পুজো করেছিলেন। 

এর কিছুদিনের মধ্যেই টাকির তৎকালীন জমিদার কৃষ্ণচন্দ্রকে মা কালী স্বপ্নাদেশ দেন যে তিনি যেন মায়ের পুজোর ঘটটি নদী থেকে তুলে প্রতিষ্ঠা করেন ও নিয়মিত পুজো করেন। জমিদারমশাই তখন লোক লাগিয়ে ইছামতী নদীর কূল থেকে ঘটটি তুলে এনে এই মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেই থেকে ওই ঘট এখানে পুজো হয়ে আসছে। যদিও তার পাশে মায়ের মৃণ্ময়ী মূর্তিও পুজিত হয়। নদীর কূলে ঘটটি পাওয়া গিয়েছিলো বলে মা কালী এখানে কূলেশ্বরী মা নামে পরিচিত হোন, আর এই মন্দির কূলেশ্বরী কালীবাড়ি বা কূলের কালী বাড়ি নামে বিখ্যাত হয়ে ওঠে। (এই প্রসঙ্গে অনেকেই কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্রর সাথে টাকির জমিদার কৃষ্ণচন্দ্র রায় চৌধুরীকে গুলিয়ে ফেলেন)

অন্যমতে বহু বছর আগে ইছামতীতে জাল ফেলে মাছ ধরছিলেন এক জেলে। তাঁর জালে উঠে আসে সুন্দর এক নকশা করা ঘট। সেই কথা পৌঁছয় টাকির জমিদার বড় রায়চৌধুরীর কানে। সেই রাতে স্বপ্ন দেখেন জমিদার গিন্নি। চালা ঘর তৈরি করে ঘটটি প্রতিষ্ঠা করার আদেশ দেন দেবী। সেখানেই খড়-বিচালি, গোলপাতা দিয়ে মাটির দেওয়ালের মন্দির করে কালীপুজোর অয়োজন করা হয়।  

একসময় ইছামতী-যমুনার একটি শাখা বনগাঁ হয়ে বেরিয়ে শাঁকচূড়া হয়ে এই মন্দিরের পাশ দিয়েই প্রবাহিত হত। দিনে দিনে সেই শাখানদী লুপ্ত হয়ে গেছে, মাটির তৈরি আসল মন্দিরটিও একসময় নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তীকালে তৈরি হওয়া মূল মন্দিরের সামনে বড় নাটমন্দির, তারপরে বলি দেওয়ার জন্য রয়েছে যূপকাষ্ঠ। মায়ের গর্ভগৃহের তিন দিকে বারান্দা। গর্ভগৃহে কষ্টিপাথরের ত্রিনয়নী চতুর্ভূজা দক্ষিণা কালী পূর্ব-পশ্চিমে শায়িত মহাকালরুপী শিবের বক্ষের উপর জোড়াপায়ে দণ্ডায়মানা। মায়ের চার হাত রুপো দিয়ে বাঁধান। মন্দিরে এখনও সেই মাটির ঘটই রয়েছে, যেটিকে কেন্দ্র করে মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।  দেবী এখানে বেশ জাগ্রত। পুজোর দিনে কলকাতা-বসিরহাট, টাকি, হাসনাবাদ তো আছেই সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকেও ভক্তরা আসেন। প্রতি বছর কৃষ্ণ একাদশীতে মায়ের অঙ্গে পরে নতুন রঙের প্রলেপ। অনেকেই মনে করেন এটা মায়ের মন্দির নয়, মায়ের বাড়ি। ফলে রাতে মা এই মন্দির প্রাঙ্গণে ঘুরে বেড়ান। অনেকেই মাকে পাশের পুকুর পাড়ে একটি পুরোনো বকুল গাছ থেকে পা ঝুলিয়ে রাতে পুকুর পাড়ে বসে থাকতে দেখেওছেন। বিশ্বাস আর ভক্তিতে ভর করেই আজ চার শতাব্দী ধরে পূজিত হচ্ছেন মা কূলেশ্বরী।​

এই মন্দিরের পূজারীরা হলেন চক্রবর্তীরা, জমিদারেরা বারেন্দ্রভূমির ব্রাহ্মণ-‘মৈত্র’ উপাধিপ্রাপ্ত অনন্ত চক্রবর্তীকে  কান্যকুব্জ থেকে টাকিতে আমন্ত্রণ করে আনেন। তারপর থেকে চক্রবর্তীরাই এখানকার সেবাইত। এখানকার সেবক এবং পুরোহিত ছিলেন সন্ন্যাসী সর্বানন্দ গিরি মহারাজ। তাঁর সাংসারিক নাম সনৎ কুমার চক্রবর্তী। ২০০৫ সালে এলাহাবাদ কুম্ভে সন্ন্যাসদীক্ষা নিয়ে তিনি হলেন সর্বানন্দ গিরি মহারাজ।  তিনি টাকি মা কূলেশ্বরী সেবাশ্রম সংঘ স্থাপন করেন এবং ত্রিশক্তি মন্দির স্থাপন করেন। 

এখানে নিত্যপূজা ও অন্নভোগ ছাড়াও বছরের বিশেষ বিশেষ তিথি উপলক্ষে পুজো হয়। মায়ের ভোগে পোলাও, খিচুড়ি, সবজি, মাছ ও পাঁঠার ঝোল রান্না করা হয়। কালী পুজোর রাতে ও প্রতি অমাবস্যায় মায়ের বিশেষ পুজো হয় এখানে। প্রতি পুজো তে প্রথা মেনে হয় ছাগবলি। রটন্তী কালীপুজোও ধুমধাম করে হয়। প্রতি বছর দুর্গা অষ্টমীতে হয় কুমারী পুজো যা কূলেশ্বরী কালীবাড়ির একটি বিশেষত্ব বলা যেতে পারে। 

অগ্রহায়ণ মাসে এলাকার মেয়ে-বৌরা নানারকম কামনা করে উপবাস পালন করেন। এই ব্রত পালনকে ‘কূলের ঠাকুর বাড়ি পালনি’ বলা হয়।কার্তিকী অমাবস্যায় জাঁকজমক করে মায়ের পূজো হয়। চৈত্র মাসে শুক্লাষ্টমীতে অন্নদান যজ্ঞ হয়। সেই সময় গরীবদের বস্ত্র দান করা হয়। চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন 'নীলের উপবাস' উপলক্ষে এই মন্দির চত্বরে আগুন জ্বালিয়ে সন্ন্যাসীরা নৃত্য করেন -  যা দেখতে প্রতিবছরই ব্যাপক জনসমাগম হয়। । এই সময় এলাকায় যত শিবের বিগ্রহ সবাইকেই আনা হয় মায়ের আলয়ে। তাঁদের রেখে ধুনুচি নাচের আসর বসে। ধুনুচি নাচের শেষে মাকালীকে প্রণাম করে শিবকে সঙ্গে নিয়ে ফিরে যান যে যার ঘরে। 


টাকি পুবের বাড়ী

সুপ্রাচীন বনেদি বাড়ির পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম টাকি পুবের বাড়ির দুর্গাপুজো। কমলাকান্তের আমল থেকে পুবের বাড়ির সম্বৃদ্ধি শুরু হয়। কমলাকান্ত টাকি ছেড়ে অল্প বয়সেই কলকাতা গিয়ে কিছুদিন কোম্পানির অধীনে চাকরি করেন। এরপর প্রথমে আজমগরের ছোট দেওয়ান,পরে গোরক্ষপুরের দেওয়ান নিযুক্ত হন। তিনি দেওয়ানী মারফত প্রচুর টাকা পয়সা উপার্জন করে তা দিয়ে চব্বিশ পরগনা, নদীয়া, যশোহর-খুলনা প্রভৃতি জেলায় জমিদারি কেনেন।

পুবের বাড়ির দূর্গাদালান

কমলাকান্তের নাতি সূর্যকান্ত রায়চৌধুরী (জন্ম ১৮৬২) ছিলেন এই বংশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। কমলাকান্তের বানানো পুবের জমিদার বাড়িটি ইছামতী নদীর ভাঙ্গনে বাসের অযোগ্য হলে সূর্যকান্ত বর্তমান অট্টালিকাটি নির্মাণ করেন (১৯৩০ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হয়)। শরিকি ঝামেলা এড়াতে সূর্যকান্ত খুব বেশি টাকিতে থাকেননি (absentee landlords) কিন্তু তিনি টাকিতে বহু জনহিতকর কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। 

সূর্যকান্তের পুত্র জগবন্ধু রায়চৌধুরীর আমলে জমিদারী প্রথার অবসান ঘটে ফলে এই জমিদারির বেশিরভাগ সম্পত্তিই সরকার অধিগ্রহণ করে নেয়। তা সত্বেও মূল জমিদারবাড়ীটি এখনও টিঁকে আছে। জগবন্ধুর স্ত্রী নমিতা রায়চৌধুরীর উদ্যোগে বাড়ীটা দেবোত্তর সম্পত্তিতে পরিণত হয়, যেকারণে প্রতিবছর নিয়মমেনে এবং বাধ্যতামূলকভাবে সাবেকি প্রথায় দুর্গাপূজা করা হয়। আজ আর নেই সেই ঝাড়বাতির রোশনাই। তবুও প্রাচীন রীতি মেনে আজও সাবেকিয়ানায় মোড়া জমিদারবাড়ির দূর্গাপুজো। 

পুবের বাড়ি - রাতের আলোকসজ্জা

দুর্গাপুজোয় কামান দাগা হত, ১০৮টি পাঁঠা ও ১টি মহিষ বলি হত। শতাব্দী প্রাচীন হাঁড়িকাঠ, খাঁড়া এখনও আছে। তবে ২০১৮ সাল থেকে পশুবলি প্রথা বন্ধ করা হয়েছে। এখন অষ্টমীর সন্ধিপুজোয় চালকুমড়ো বলি হয় ওই হাঁড়িকাঠে। পঞ্জিকার সময় অনুৃযায়ী প্রথামাফিক সিঁদুর খেলার পর পুবের বাড়ির দুর্গা প্রতিমা ২৪ জন বেয়ারার কাঁধে চেপে রাজবাড়ি ঘাটে যায়। তারপর টাকির বিভিন্ন মণ্ডপ থেকে প্রতিমা বেরোয়। প্রতিমা নিরঞ্জন হয় দু’টি নৌকোর মাঝে, বাঁশের উপরে প্রতিমা বসিয়ে। দু’টি নৌকা দূরে সরে যায়, প্রতিমা পড়ে জলে। 

বছর চারেক আগে টাকির ‘পুবের বাড়ি’ লিজ়ে নেন কলকাতার এক পর্যটন ব্যবসায়ী। ঝিমিয়ে পড়া বাড়ির দুর্গাপুজোকে চাঙ্গা করার চেষ্টা চলছে। পুজোর চারদিন সবার জন্য খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভগ্নপ্রায় পুবের বাড়ির পুরনো কাঠামো বজায় রেখে জমিদার বাড়ির ধাঁচে ঝাঁ চকচকে করে তোলার পরিকল্পনা আছে। বাড়ির আশপাশে যে ফাঁকা জায়গা আছে, সেখানেও পুরনো জমিদার বাড়ির ধাঁচে একাধিক কটেজ গড়ে তোলার কথা ভাবা হচ্ছে। জমিদার বাড়ির ঠাকুর দালানের সামনের পুরনো পুকুর সংস্কার করে পর্যটকদের বিনোদনের ব্যবস্থাও করা হবে। ইতিমধ্যে হেরিটেজ আরকিটেক্ট ডিজ়াইনারদের পরামর্শ মতো শুরু হয়েছে পরিকল্পনা। ব্যবসায়ী পরিবারের তরফে শর্মিষ্ঠা ঘোষ জানিয়েছেন, এখানে এমন ভাবে নির্মাণ কাজ করা হবে, যাতে পর্যটকেরা দুর্গাপুজোয় এলে অনুভব করেন, হোটেলে নয়— বরং প্রাচীন জমিদার বাড়িতে পুজো কাটাতে এসেছেন। 


টাকি রামকৃষ্ণ মিশন 

পশ্চিমবাড়ির ডাঃ অজিত কুমার রায়চৌধুরী ছিলেন রামকৃষ্ণ মিশনের দীক্ষিত, বেলুড় মঠের দ্বিতীয় সভাপতি স্বামী শিবানন্দজীর শিষ্য। তিনি টাকিতে প্রথম দাতব্য চিকিৎসালয় নির্মাণ করেন। গুরুর নামে সেই চিকিৎসালয়ের নাম দেন স্বামী শিবানন্দ সেবাশ্রম, যেটা এখন পুরনো হাসপাতাল। অজিতবাবুর চেষ্টাতেই তাঁদের পশ্চিমের বাড়িতে ১৯৩১ সালের ১লা জানুয়ারি 'শ্রীরামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ সঙঘ' স্থাপিত হয়। শুরুতে একটি প্রাইমারি স্কুলই ছিল যেখানে ক্লাস ফোর অবধি পড়ানো হত। এর পরে সুবোধ কৃষ্ণ দাসের প্রাইমারি স্কুল এবং ফণীভূষণ ঘোষের লোয়ার প্রাইমারি স্কুল 'শ্রীরামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ সঙঘ'-এর সাথে যুক্ত হয়। গঠিত হয় টাকি শ্রীরামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ সঙঘ উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়। 


১৯৩২ সাল নাগাদ টাকির বাসিন্দা রামকৃষ্ণ কুণ্ডু দুই বিঘা জমি দান করেন, তখন আজকের জায়গায় স্কুলটি উঠে আসে। ১৯৩৮ সাল নাগাদ বেলুড় মঠের রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের থেকে অনুমোদন পায় এবং 'টাকি রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম' বলে পরিচিত হয়। অন্যান্য মিশন স্কুলের মতোই সুন্দর পরিবেশ এখানে। ছিমছাম, পরিষ্কার আশ্রম প্রাঙ্গণের ডানদিকে স্কুল আর বাঁদিকে মিশনের অফিস ঘর। আর গেটের একদম সোজাসুজি প্রার্থনা গৃহ। প্রবেশ পথের দুপাশ ফুলগাছে সাজানো। সন্ধ্যাবেলার আরতি খুবই সুখকর এক অভিজ্ঞতা। 


টাকির রাজবাড়ি ঘাট 
আসল রাজা হওয়া চাট্টিখানি কথা নয় বটে! 

টাকি রাজবাড়ি ঘাট হল টাকি ভ্রমণের কেন্দ্র - এখান থেকে পেয়ে যাবেন টোটো, ইচ্ছা হলে হেঁটে ঘুরে বেড়ান ইছামতীর ধার দিয়ে, বা ঘাট সংলগ্ন পার্কে বসে ইছামতীর বয়ে যাওয়া দেখুন। 

এখন পর্যটনের খাতিরে নামে কাটছে টাকির রাজবাড়ি বলে, কিন্তু এই রায়চৌধুরীরা ছিলেন জমিদারমাত্র। এবং এঁদের যে বাবুয়ানি তার মূলে ছিল দেওয়ানগিরি করে উপার্জিত পয়সা। টাকির জমিদারির ইতিহাস প্রায় চারশো বছরের। গৌড়েশ্বর আদিশুরের আমন্ত্রণে কাণ্যকুব্জ থেকে আগত কায়স্থ পঞ্চকের অন্যতম বিরাট গুহ ছিলেন এই রায়চৌধুরী বংশের আদিপুরুষ। মুঘল সম্রাট আকবরের রাজত্বকালের শেষের দিকে (ধরে নেওয়া যায় ১৬০০ সালের আশেপাশে) দুর্লভ গুহ মজুমদার টাকি-শ্রীপুর অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেন এবং এই অঞ্চল দেখভাল করা ও খাজনার হিসেব রাখার দায়িত্ব পান। তার বড় ছেলে ভবানীদাস টাকি অঞ্চল লাভ করেন অন্যদিকে তার মেজ ছেলে জগদানন্দ শ্রীপুর অঞ্চলের দায়িত্ব পান। তবে জমিদার হিসেবে ভবানীদাস রায়চৌধুরীকেই টাকির জমিদার বংশের আদি পুরুষ বলে মনে করা হয়। কিছুদিন পর ভবানীদাস টাকির পার্শ্ববর্তী কঠুর অঞ্চলের স্থানীয় জমিদার শ্রীশচন্দ্র ঘোষের মেয়েকে বিয়ে করে টাকির পার্শ্ববর্তী মাইহাটির বিস্তীর্ণ অঞ্চল লাভ করেন। ভবানীদাসের পুত্র কৃষ্ণদাস রায়চৌধুরী (বিরাট গুহের অধস্তন পঞ্চাদশ পুরুষ) টাকিতে পাকাপাকি বসতি স্থাপন করেন। কৃষ্ণদাসের চেষ্টায় টাকি সম্ভ্রান্ত এবং ব্রাহ্মণ পরিবারের বাসভূমিতে পরিণত হয়। তারপর বহু উত্থান পতনের মধ্যে দিয়ে ভবানীদাসের পুত্র-প্রপৌত্রগণ জমিদারি পরিচালনা করেছেন। অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে রামসন্তোষের সময় তার চার পুত্র এই জমিদার বংশকে ভাগ করে নেয় -  দয়ারাম (পূর্ব বাড়ি), শ্যামসুন্দর (পশ্চিমবাড়ি), রামকান্ত (দক্ষিণবাড়ি/মুন্সীবাড়ি), গোবিন্দ (উত্তরবাড়ি)। এদের মধ্যে এখন শুধু পুবের বাড়িটিই ঠিকঠাক দাঁড়িয়ে আছে। টাকির জমিদারদের ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে এই লিংকে ক্লিক করুন। 

✱ উত্তরের আটচালা জমিদার বাড়ি অনেক কাল আগেই ভগ্নপ্রায়। সেখানেই ১৯৯০ সালে গড়ে উঠেছে নৃপেন্দ্র অতিথিশালা। 

✱ টাকির দক্ষিণের জমিদারবাড়িকে মুন্সীবাড়ি বলা হত কারণ রামকান্ত রায়চৌধুরী ছিলেন ব্রিটিশ সরকারের চিফ সেক্রেটারী বা মুন্সী। তাঁর আমল থেকেই টাকিতে দুর্গাপূজা জৌলুস বাড়তে শুরু করে। রামকান্তের জ্যেষ্ঠ পুত্র শ্রীনাথের পুত্র ছিলেন কালীনাথ রায়চৌধুরী। তিনি ছিলেন একজন উদার, সাংস্কৃতিক চেতনা সম্পন্ন জমিদার।কালীনাথের বাড়িতে দুর্গাপুজো জাঁকজমকের নতুন দিগন্ত স্পর্শ করেছিল। কালীনাথের উদ্যোগেই সোলাদানা থেকে বারাসাত পর্যন্ত ১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে প্রায় দশ বছর ধরে রাস্তা তৈরি হয়েছিল। গান লেখা হয়, 'ধম্ম অবতার এখন বাবু কালীনাথ/নতুন রাস্তা দিলে, সোলাদানা-বারাসাত'। পরবর্তীকালে রাস্তাটিরই নাম হয় টাকি রোড। এই দক্ষিণের জমিদারবাড়িকেই অনেকে রাজবাড়ী বলে থাকেন। তবে আজকে এই বাড়ির অধিকাংশই ইছামতীর গর্ভে তলিয়ে গেছে। 

✱ পশ্চিমবাড়িটিও প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত। এই বাড়ির পুজোর দালানের অংশবিশেষ এখন হেরিটেজ গেষ্ট হাউসের সামনে দেখতে পাওয়া যায়।

পশ্চিমবাড়ি (অর্কিড ক্লাবের বিপরীতে) প্রাঙ্গণে, টাকি মাউণ্ট জিওন ইংলিশ মিডিয়াম সেকেণ্ডারি স্কুলের সামনে আছে ভাষা শহীদ মিনার। ২০০১ সালে টাকি পুরসভা এই মিনারটি স্থাপন করেন। মিনারের তলদেশে নকশা ও লেখার ধারণা দেন মুকুল রায়চৌধুরী। প্রতি বছর  টাকি পৌর নাগরিক সমিতির উদ্যোগে ও পরিচালনায়, টাকি পৌরসভার সহযোগিতায় ২১শে ফেব্রুয়ারি এখানে ভাষা দিবস অনুষ্ঠান সুসম্পন্ন হয়ে থাকে।


টাকির বিজয়া দশমী -  জমিদার বাড়ির দূর্গাপুজো থেকে বারোয়ারী দূর্গাপুজো

টাকি এবং শ্রীপুর শহরের বিভিন্ন পূজা মন্ডপ কমিটির উদ্যোগে বিজয়া দশমীর দিন ইছামতী নদীবক্ষে প্রতিমা নিরঞ্জনের রীতি দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে। এক সময়ের বনেদী বাড়িগুলোর মধ্যে এখন টাকিতে বনেদি পুজোবাড়ি হিসেবে টিকে আছে মাত্র কয়েকটাই। শঙ্কর রায়চৌধুরী, জমিদারদের পুবের বাড়ি, এবং ঘোষবাবুর বাড়িতে প্রাচীন রীতিনীতি মেনে পুজো হয়। পুজো দেখতে সে সময়ে সুন্দরবন এলাকা-সহ শহর কলকাতা থেকেও মানুষ আসতেন এই এলাকায়। 

টাকিতে প্রথম দূর্গাপুজো অবশ্যই রায়চৌধুরী জমিদার বাড়িতেই হয়েছিল। প্রথম দিকে এই পুজো ছিল ঘরোয়া এবং গ্রামের লোকের খুব বেশি প্রবেশাধিকার ছিল না। তবে দূর্গাপুজোর জাঁকজমক শুরু হয় রামকান্ত মুন্সীর সময় থেকে, যা তুঙ্গে ওঠে তাঁর প্রৌত্র কালীনাথ মুন্সীর সময়ে। কলকাতার বাবু কালচারের সমান তালে এই মুন্সীবাড়ির পুজো বিখ্যাত ছিল। কলকাতার সম্ভ্রান্ত বাঙালীরা যেমন দ্বারকানাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে ব্রিটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বড় অফিসাররাও এই পুজোতে আমন্ত্রিত থাকতেন। পাল্লা দিয়ে পুবের বাড়িতেও দূর্গাপুজোর আড়ম্বর বাড়তে থাকে।

টাকির দূর্গাপুজোয় সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ধর্ম ছাপিয়ে বাঙ্গালীর দূর্গাপূজা হয়ে ওঠে এক সামাজিক অনুষ্ঠান। পুজোর আগে আগমনী গানের রেওয়াজ ছিল। ডাকের সাজের ঠাকুরই সব মণ্ডপে দেখা যেত। এই সময় পুজোবাড়িতে নাচ-গানের আসর, পুতুল নাচ, কবিগানের লড়াই, ইছামতী নদীতে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা ইত্যাদির আয়োজন করে এবং প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় প্রতিমাগুলিকে নৌকায় চাপিয়ে নদী বক্ষে ঘোরানো হত এবং তারপর মাঝনদীতে বিসর্জন হত। এই অনুষ্ঠান দেখতে ভিড় করত ইছামতীর দুই পাড়ের মানুষ। তখন থেকেই এই অঞ্চলের দূর্গা পূজার শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ হয়ে ওঠে বিজয়া দশমীর দিন ইছামতী নদীতে দুর্গা প্রতিমার ভাসান।

এখন সেই দিন নেই, সেই জমিদারও নেই। তবে টাকি আছে টাকিতেই। দুর্গোৎসবের জাঁকজমকের দায়িত্ব এখন বিভিন্ন ক্লাবগুলির উপর। তারাই টাকির দুর্গাপুজোর ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। যেমন পশ্চিম বাড়ীর পুজোর দায়িত্বে আছে বর্তমানে অর্কিড ক্লাব। বিংশ শতকে বিপ্লবী আন্দোলনের সূত্র ধরে এইঅঞ্চলে শরীরচর্চার জন্য ব্যয়ামাগার ও শক্তির আরাধনা শুরু হয়। এবং স্থানীয় স্তরে প্রতিষ্ঠিত ক্লাবগুলির উদ্যোগে বারোয়ারি দুর্গাপুজোর চল শুরু হয়। 

জমিদারদের উদ্যোগের বাইরে এসে টাকিতে প্রথম সার্বজনীন দুর্গোৎসব হয় মহাকালী নাট্য সমাজ ও শক্তি সংঘের(বর্তমান থুবা ব্যয়াম সমিতি, প্রতিষ্ঠা ১৯৩২) ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়। এরপর একে একে বিপ্লবী সংঘ, বিবেকানন্দ স্পোর্টিং, যুবগোষ্ঠী প্রভৃতি ক্লাবের পূজা সার্বজনীন দুর্গোৎসবকে একটা বৃহত্তর রূপ দেয়। জমিদার বাড়ির পাশাপাশি এই সমস্ত ক্লাবগুলি বিজয়ার দিনে ইছামতী নদীতে প্রতিমা নিরঞ্জনে অংশ নিত। পরে জমিদারি প্রথা বিলোপের পর ক্লাবের পুজোগুলি এই এলাকার মূল পুজায় পরিণত হয়। জমিদারদের প্রথাগত ডাকের সাজ, বা বনেদি আচার অনুষ্ঠানের বদলে গুরুত্ব পায় আধুনিকতা, থিম ও জনসাধারণের অংশগ্রহণ।

 এই দিন কয়েক ঘন্টার জন্য আন্তর্জাতিক সীমানা খুলে দেওয়া হতো এবং কোন পাসপোর্ট ছাড়াই এপারের মানুষ ওপারে যেতে পারত। শ্রীপুরের মানুষ ঘুরে দেখতো টাকিকে, অন্যদিকে টাকি শহরের অনেক মানুষ একবার দেখে আসার চেষ্টা করত তাদের পূর্বপুরুষের বাসস্থান। কিন্তু প্রতিরক্ষা, অনুপ্রবেশ ও কূটনৈতিক সমস্যা নানা কারণে ২০১২ সাল থেকে বিজয়ার দিন এই অবাধ পারাপার বন্ধ হয়ে যায়। বিএসএফ ও বিডিআর(বাংলাদেশ রাইফেলস) উভয়ের কড়া নজরদারির মধ্যে প্রতিমা নিরঞ্জন চলতে থাকলেও বিজয়ার সেই উচ্ছ্বাস আজ অনেকটা ম্লান হয়ে এসেছে। 


টাকি - যাওয়া আসাঃ 

১৯০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মার্টিন কোম্পানির ট্রেন ছুটতে শুরু করে বারাসাত-বসিরহাট লাইনে। ১৯০৯ সালে সেই লাইন চিংড়িহাটা (হাসনাবাদ) পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। ১৯৫৫ সালের ১ জুলাই মার্টিন রেল বন্ধ হয়ে যায়। দেশভাগের আগে এই রেলপথই ছিল মানুষের একমাত্র নির্ভরযোগ্য পরিবহণের মাধ্যম। পরে জনগণের প্রবল বিক্ষোভের জেরে ২ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৭৪ কিলোমিটার ব্রড গেজ লাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ১৯৬২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বারাসাত-হাসনাবাদ প্যাসেঞ্জার ট্রেন চালু হয়। ১৯৮৩ সালের ১৩ মে হাসনাবাদ থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত ডিজেল ইঞ্জিনচালিত ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এখন শিয়ালদহ থেকে দমদম-বারাসাত হয়ে ইলেকট্রিক লোকাল ট্রেন যাচ্ছে সোজা হাসনাবাদ। হাসনাবাদের ঠিক আগের ষ্টেশন হল টাকি রোড। ষ্টেশনে নেমেই টোটো পেয়ে যাবেন। 

কলকাতা থেকে টাকি গাড়ি করে যাওয়াও সম্ভব। তিনটি রাস্তা আছে। প্রথম বারাসাত হয়ে টাকি রোড ধরে চলে আসা যায়। আগে এই রাস্তার অবস্থা ছিল খুব খারাপ, এখন রাস্তা বেশ ভালো। বাসে করেও এই রাস্তা দিয়ে আসা যায়, তবে ট্রেনের তুলনায় সময় অনেক বেশি লাগে। আর আসতে পারেন সায়েন্স সিটির উল্টোদিকে বাসন্তী হাইওয়ে ধরে, বানতলা-ভাঙ্গর-মালঞ্চ হয়ে। এই রাস্তাও মোটামুটি ভালোই আছে এখন অবধি। তৃতীয় রাস্তাটি হল রাজারহাট মেন রোড ধরে হাড়োয়া হয়ে। 


টাকি - থাকবেন কোথায়? 

টাকিতে এখন রাতে থাকার জন্য অনেক গেস্ট হাউ্স। এই সব গেস্টহাউসে সারা বছরই বিভিন্ন বাংলা ছবির শুটিং হয়। কলকাতার সিনেপাড়ার অভিনেতা-অভিনেত্রীদের প্রায় সবাই কোনও না কোনও সময় পা এসেছেন টাকিতে।গয়নার বাক্স, বিসর্জন, চাঁদের পাহাড়, পাখি, কাগজের নৌকো, অপুর পাঁচালি, গল্প হলেও সত্যির ইত্যাদি সিনেমার শুটিং হয়েছে টাকিতে। টিভি সিরিয়ালের শু্টিংয়ের জন্যও অনেক প্রয়োজক-পরিচালকের প্রথম পছন্দ টাকিকেই। 

সপ্তাহের মাঝে এলে হোটেল পাওয়া খুবই সহজ। কিন্তু সপ্তাহান্তে এখানে ভালোই জনসমাগম হয়, তাই আগে থেকে হোটেল বুক করে আসাটাই ভাল। 

Hotels at Taki: 

সুহাসিনী গেস্ট হাউস  - 93308 26779
নৃপেন্দ্র অতিথিশালা/টাকি মিউনিসিপ্যালিটি গেস্ট হাউস: 03217-233324 
উৎসব বাগান বাড়ি http://takiutsabbaganbari.com
টাকি ইকো পার্ক গেস্ট হাউস : +91 7047745599/+ 91 9083848201
টাকি সানরাইজ গেস্ট হাউস
রূপসী বাংলা লজ - 032172 33999
দিশা গেস্ট হাউস - 87687 88502
টাকি সোনার বাংলা - The most luxurious hotel in Taki
PHE Guest House
শান্তিনিকেতন গেস্ট হাউস, 8016043744
আম্রপাল্লী গেস্ট হাউস 032172 34471
বিধান সৈকত গেস্ট হাউস (১ এবং ২) 
টাকি ট্যুরিস্ট বাংলো গেস্ট হাউস 
বিশ্রাম বাগান বাড়ি, 9007012270
অবকাশ অতিথিশালা 


খাওয়া দাওয়া/ কেনাকাটা

রাত্রিবাস করলে টাকিতে যেখানে থাকবেন সেখানেই নিজের পছন্দমত সকাল/দুপুর/সন্ধ্যেবেলা এবং রাতের খাবার আগে থেকে বলে রাখলে ভালো। যদি রাতেই ফিরে যাওয়ার প্ল্যান থাকে তাহলে টাকি মিউনিসিপ্যালিটি গেস্ট হাউসে দুপুরের খাওয়া সারতে পারেন। শুধু দেশি মুরগি বা খাসি নয়, এখানে পাবেন ইছামতীর মাছ-ও।

মিষ্টি হিসেবে ছানার মালপোয়ার কথা অনেকেই লিখেছেন, তবে দয়াময়ী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের মাখা সন্দেশ একবার খেয়েই দেখতে পারেন। 

শীতকালে কপাল ভাল থাকলে পেতে পারেন খাঁটি নলেন গুড় বা সকালে ঘুরতে বেড়িয়ে খেয়ে দেখতে পারেন খেঁজুরের রস। বেশি দেরি করলে রস আর রস থাকবে না, হাল্কা গেঁজে গিয়ে তাড়ি হয়ে যাবে। তবে ভাল গুড় পাওয়া চাট্টিখানি কথা না, খেয়ে ভালো দেখে কিনে এনে দেখলেন তলায় চিনির ঢেলা - এও হয়েছে।  

কেনাকাটি করার মত এখানে সে রকম কিছু নেই। তবে ট্রেনে এলে গামছা কিনতে পারেন। ১০০-১৪০ টাকার মধ্যে ভাল গামছা পেয়ে যাবেন।  


Resources:

https://www.bifocalism.com/historical-and-memorable-festival-of-taki-durgapuja/
https://m.sangbadpratidin.in/article/traditional-puja-is-the-main-attraction-of-durga-puja-in-taki/317630
https://arunavabose.wordpress.com/2019/06/03/ghumchakkars-diary-62-from-the-banks-of-icchamati/
শহর টাকির ইতিহাসঃ https://www.facebook.com/Shahartakiritihas/
বসিরহাট মহকুমার ইতিকথা - পান্নালাল মল্লিক 
বাংলার রাজবাড়ির ইতিহাস - সঞ্চিতা পাল
জমিদার দর্পনে টাকি- সমীর রায়চৌধুরী
টাকির ইতিহাস সন্ধান, প্রেমাংশু বন্দোপাধ্যায়
টাকির ইতিহাস সন্ধান, শিব শংকর গড়াই
শতবার্ষিকী স্মারক গ্রন্থ, টাকি রাষ্ট্রীয় জেলা গ্রন্থাগার 

No comments: