Pages

Sunday, February 19, 2023

শ্রীরামপুর পর্ব ৪ঃ মদনমোহন মন্দির

মদনমোহন মন্দিরটি শ্রীরামপুরের আকনা, চৌধুরী পাড়াতে অবস্থিত। বল্লভপুরের রাধাবল্লভ জীউ মন্দির থেকে হেঁটেই এই মন্দিরটিতে আসা সম্ভব। শ্রীরামপুর স্টেশন থেকে প্রায় ২ কিমি দূরে আকনা চৌধুরীপাড়া। 

এখন যেখানে ওয়ালশ হাসপাতাল ঠিক সেই জায়গায় দক্ষিণ ভারতীয় রামানুজ সম্প্রদায়ের (অন্য মতে নেপালের ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী সম্প্রদায়) কিছু  বৈষ্ণব বাস করতেন। ভজন-নামসংকীর্তন করে তাঁরা দিন কাটাতেন। একটি বৈষ্ণব আখড়া গড়ে ওঠে এখানে। শেওড়াফুলির রাজা মনোহর রায় এই জমিটি এই বৈষ্ণবদের দান করেন। তাঁরা সেই আখড়ায় মদনমোহনের একটি বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু হঠাৎ তাঁরা কোন কারণে এই আখড়া ছেড়ে চলে যান, বিগ্রহটি এখানেই থেকে যায়। আখড়া-ভবনটি আস্তে আস্তে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং জঙ্গলে ঢাকা পড়ে যায়। 

১৮৩৬ সালে যখন ড্যানিশ সরকার এই জায়গায় হাসপাতাল তৈরি শুরু করেন, তখন এই মদনমোহনের মূর্তি খুঁজে পাওয়া যায়। এই অবস্থায় ড্যানিশ সরকারের এক উচ্চপদস্থ কর্মচারী শ্রীগোপাল চন্দ্র মুখোপাধ্যায় এই মূর্তিটিকে গ্রহণ করেন এবং নিজের বাড়িতে মদনগোপালের পূজা শুরু করেন।গোপালবাবু পুরুষানুক্রমে শালগ্রামে শ্রীমধুসূদনের পূজা করতেন। মদনমোহন বিগ্রহ পাওয়ার পর তিনি বৃন্দাবন থেকে অষ্টধাতুর রাধারানি ও পাথরের গোপালের মূর্তি নিয়ে আসেন। শালগ্রামের সঙ্গে এই তিনটি বিগ্রহ নিজের বাড়িতে ভক্তিভরে পূজার্চনা করতে থাকেন।  


এই নিত্যপুজোর জন্য তৎকালীন ড্যানিশ সরকার গোপালবাবুকে বার্ষিক ১২০ টাকা করে দিতেন। ১৮৪৫ সালে ব্রিটিশ সরকার এই শহরের দায়িত্ব নিলে এই বার্ষিক ভাতা বন্ধ হয়ে গেলেও ব্রিটিশরা গোপালবাবুকে এককালীন ১০,০০০ টাকা দান করেন। এই টাকা পেয়ে গোপালবাবু আজকের মদনমোহন মন্দির বানাতে হাত দেন। দূর্ভাগ্যের বিষয় এই যে গোপালবাবু এই মন্দির তৈরির শেষ অবধি দেখে যেতে পারেননি। তিনি ছিলেন অপুত্রক, তাই ছেলের আশায় তিনি চারবার বিবাহ করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর তৃতীয় এবং চতুর্থ স্ত্রী এই মন্দির গঠন সম্পূর্ণ করেন এবং শালগ্রামের সঙ্গে  মদনমোহন জিউ সহ তিনটি বিগ্রহ নতুন মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন। 

এই মন্দিরটি বানাতে প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল। উচ্চ ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত, দক্ষিণমুখী, আটচালা শৈলীর মন্দিরটির উচ্চতা প্রায় ৫৫ ফুট।

আজও এই মন্দিরে নিত্য পুজো করেন পালাদাররা। রাধাবল্লভ জিউ এর মন্দিরের মতো এখানেও বছরের বিভিন্ন উৎসবে জমজমাট আয়োজন হয়। রাস উৎসবে ভক্তদের কাঁধে চেপে বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্রসাদ গ্রহণ করেন স্বয়ং মদনমোহন দেব।

মদনমোহন মন্দিরের পাশেই রয়েছে শ্রীরামপুরের চৌধুরী পরিবারের বিখ্যাত ঠাকুরদালান। এককালে এখানেই মহা ধুমধামে পালিত হতো দুর্গাপুজো। 

তথ্যসূত্রঃ

https://templesofbengal.blogspot.com/2017/05/madanmohan-temple-akna-choudhuri-para.html

No comments: