|
Residence of Khestra Mohan Sha |
শ্রীরামপুরের অন্যতম কৃতিমান ব্যক্তি ছিলেন ক্ষেত্রমোহন সা' (১৮৪১-১৯১৪)। শ্রীরামপুর স্টেশনের কাছেই ক্ষেত্রমোহন সা' স্ট্রিটে অবস্থিত তাঁর বসতবাটি এবং মেলাবাড়ি। ক্ষেত্রমোহন সা' জন্মেছিলেন ১৮৪১ সালে, বিহারে। ইষ্ট ইণ্ডিয়া রেলওয়ে কোম্পানির ঠিকাদার ছিলেন তিনি, সেই সুবাদেই শ্রীরামপুরে এসে বসবাস শুরু করেন। আজ যেখানে কে.এম. শাহ রোড, সেটিই আগে পরিচিত ছিল অক্সফোর্ড স্ট্রীস্ট নামে। এখানেই আছে ক্ষেত্রমোহন সাহের বসতবাড়িটি। পরবর্তীকালে ক্ষেত্রমোহন সাহ পাটের ব্যবসায় নামেন এবং প্রভূত অর্থ উপার্জন করেন। এই অর্জিত পয়সাতেই তিনি শুরু করেছিলেন বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজকর্ম।
ক্ষেত্রমোহন সা' গোদাবরীতে স্নান করতে গিয়ে একটি শিবলিঙ্গ পান, পরে ১৮৯৭ সালে সেই শিবলিঙ্গটিকে সেটি তিনি শ্রীরামপুরে প্রতিষ্ঠা করেন। এই শিবমন্দিরকে ঘিরে প্রায় আট বিঘা জমি এবং একটি পুকুরকে নিয়েই মেলাবাড়ি - কারণ সেই বছর থেকে ক্ষেত্রমোহন সা' এই চত্বরে শিল্প ও কৃষির সমন্বয়ে মেলা শুরু করেন। প্রথম বছরের মেলায় উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ I.C.S. Officer Mr. J. Windoor। চরিত্রগত ভাবে ধর্ম, শিল্প এবং কৃষির একসাথে উপস্থাপনায় এই মেলা অন্যরকম। এই মেলার পোশাকী নাম 'শ্রী শ্রী শিবশঙ্কর জীউ কৃষি কলা শিল্প প্রদর্শনী ও মেলা'।
তবে স্থানীয় লোকজনের কাছে এই মেলা পরিচিত ‘ক্ষেত্র সা' বা 'ক্ষেত্রমোহন সা'-এর মেলা' হিসেবেই। আগে 'সঙতলার মেলা'ও বলা হত। শিবরাত্রির দিন থেকে শুরু হয়ে এই মেলা চলে দোল পর্যন্ত টানা এক মাস। সে সময়ে সবচেয়ে বড় ফসলগুলো এখানে প্রদর্শিত হত। কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুল দিয়ে রামায়ণ ও মহাভারতের দৃশ্যাবলীর প্রদর্শন হত। চণ্ডীগান, পুতুল নাচ, যাত্রাপালা, যাদু প্রদর্শনী, হস্তশিল্প ও কুটীর শিল্পের প্রদর্শনীও হত।
স্থানীয় কৃষির প্রসারে ও কিছুটা ধর্মীয় আঙ্গিকে এই মেলা শুরু হলেও বর্তমানে আধুনিকতার ঝাঁজে নিজেকে অনেকটাই বদলে নিয়েছে এই মেলা। কালের নিয়মে মেলার জৌলুস কমেছে। বর্তমানে এই মেলার উদ্যোক্তা শা' পরিবারের বর্তমান কর্তা কানাইলাল শা' এবং উত্তম শা'।
বর্তমানে অনুষ্ঠানটি বজায় থাকলেও পুরো ব্যাপারটিই কোন মতে টিকে আছে মাত্র। ধর্মশালা, চিকিৎসক, অবৈতনিক বিদ্যালয় সবই ছিল এক সময়ে। পরাধীন ভারতে হুগলি ছাড়াও বর্ধমান, অবিভক্ত চব্বিশ পরগনা, হাওড়া এবং কলকাতা থেকেও প্রচুর মানুষ আসতেন। অনেকে হাতি-ঘোড়া-উট নিয়েও আসতেন এমন শোনা যায়। দরিদ্রদের পাত পেড়ে খাওয়ানো হত। মেলা প্রাঙ্গণ ছাড়িয়ে রাস্তার ধারে অনেকটা জায়গা জুড়ে দোকান বসত। প্রায় শ’তিনেক অস্থায়ী দোকান হত।
|
মেলা বাড়ির মূল দরজা |
ক্ষেত্রমোহন ও তাঁদের বংশধরদের আহ্বানে এই মেলাবাড়িতে নানা সময় এসেছেন সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রশেখর ও বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংয়ের মতো ব্যক্তিত্ব। মেলা প্রাঙ্গণের প্রবেশপথে একসময় নহবত বসত। সেই জায়গাটিতে আজ বট, অশ্বত্থ আর আগাছায় ভর্তি। সাথে যুক্ত হয়েছে বেদখল।
বর্তমানে মেলার পরিধি ছোট হয়েছে, কমেছে দোকানের সংখ্যা। তবুও গৃহস্থালীর নানান জিনিসপত্র, শিশুদের খেলনা, বিভিন্ন খাবার-দাবার, জিলিপি, বাদামভাজা, কাটি ভাজা এবং স্থানীয় চিত্রশিল্পীদের চিত্র প্রদশর্নী নিয়ে আজও বেঁচে মেলাটি।
তবে মেলার মূল আকর্ষণ শিব মন্দির সহ নাটমন্দিরটি। প্রধান আরাধ্য দেবতা শিব। তাছাড়াও রয়েছে কষ্টিপাথরের কালী, অষ্টধাতুর সূর্যদেব, পাথরের অন্নপূর্ণা, রাধাকৃষ্ণ, গণেশ, রাম-লক্ষ্মণ-সীতা, হনুমান এমনকি মহাবীরের মূর্তিও। মন্দিরের দেওয়ালে রয়েছে সুদৃশ্য পোড়ামাটির বিভিন্ন কাজ।
সাম্প্রতিক আমফান ঝড়ে মন্দিরের যথেচ্ছ ক্ষতি হয়েছে, ধ্বসে পড়েছে মন্দিরের কড়ি-বরগার একাংশ। মূল দরজা সেগুন কাঠের। দরজায় এখনও টিকে ধাতুর কারুকাজ।
|
নাটমন্দির, মেলা বাড়ি |
|
Part of Mela Bari Temple Complex |
|
মন্দিরের গায়ে গাছ গজিয়েছে
|
|
মেলা বাড়ি
|
|
মেলা বাড়ির মন্দিরের চূড়া |
|
মেলা বাড়ির নাটমন্দির |
|
মেলা বাড়ির নাটমন্দির |
|
মেলা বাড়ির নাটমন্দির |
|
মেলা বাড়ি প্রাঙ্গণ |
|
মেলা বাড়ি প্রাঙ্গণ-এর পুকুর |
|
মেলা বাড়ি |
|
মেলা বাড়ি |
|
মেলা বাড়ি |
|
মেলা বাড়ি |
|
মেলা বাড়ি - বাইরে থেকে |
|
মেলা বাড়ি - বাইরে থেকে |
|
মেলা বাড়ি - বাইরে থেকে |
তথ্যসূত্রঃ
https://archives.anandabazar.com/archive/1130319/19hgly2.html dated 19th March 2013
https://dailynewsreel.in/kshetra-mohan-sha-mela-of-serampore/
Exhibition of Serampore's History & Heritage at Danish Government House
No comments:
Post a Comment