এই মন্দিরটির ইতিহাস অনেক পুরোনো। শুরুতে চালাঘরে কালীমার পুজো হত। শোনা যায় সেই সময় ডাকাতরাও ডাকাতি করতে যাওয়ার সময় মাকে পূজো দিয়ে ডাকাতি করতে যেতো। স্থানীয় মানুষদের উদ্যোগে এবং হুগলীর দেওয়ান মাতৃভক্ত বলরাম হালদারের অর্থানুকূল্যে ১৭৭২ সালে দেবী মায়ের পাকা মন্দির নির্মিত হয়।
শ্রীরামপুর-ধোবিঘাট ফেরীঘাট থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে চাতরায়, সিদ্ধেশ্বরীতলায় অবস্থিত শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালী দেবী মায়ের ত্রিকোণাকার মন্দির। মন্দিরের পাশেই বয়ে চলেছে সূরাধনী গঙ্গা। মন্দিরটি অনাড়ম্বর একচূড়া বিশিষ্ট্য। মায়ের দর্শনে ছোট নাটমন্দির দিয়ে প্রবেশ করতে হয়। নাটমন্দির লাগোয়া গর্ভগৃহ। গর্ভগৃহে শ্বেতপাথরের নির্মিত বেদীর উপর সিংহাসনে অধিষ্ঠান করছেন শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালী দেবীর মৃন্ময়ী মুর্তি।
মা কালী এখানে চতুর্ভূজা, আয়তনয়না, মুক্তকেশী, রক্তবস্ত্র পরিহিতা, শিবপরি, সালাঙ্কারা। মায়ের বামদিকের দুটি হাতে খড়্গ এবং অসুরের মুণ্ড, দক্ষিণ হাতে বরমুদ্রা ও অভয়মুদ্রা। মায়ের পায়ের নিচে আড়াআড়িভাবে শুয়ে আছেন শবরূপী শিব।
মায়ের বেদির উপর রয়েছে অনেকগুলো শালগ্রাম শিলা, ছোট শিবলিঙ্গ ও গণেশ ঠাকুরের মুর্তি। মায়ের পাশের একটি কাঠের বেদীর উপর রয়েছে রাধাকৃষ্ণ জীউ এবং নাড়ু গোপালের দুটি ছোট মুর্তি। মায়ের সামনে রয়েছে চারটি ঘট। গর্ভগৃহের উপর টাঙ্গানো আছে ডিজিটাল ক্লক এবং শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস, সারদা দেবীর দুটি বাঁধানো ছবি। মন্দিরের পাশে রয়েছে পঞ্চবটী। তার নিচে রয়েছে একটি ছোট মন্দির। সেই মন্দিরে রয়েছে কয়েকটা শিবলিঙ্গ এবং মহাদেবের মুখ আঁকা কয়েকটা কালো রঙের পাথর। ঘাট সংলগ্ন একটি স্থানে বাচ্চাদের জন্য একটি পার্ক - 'চাতরা সিদ্ধেশ্বরীতলা শিশু উদ্যান' তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিদিন দুপুরে মাকে অন্নভোগ নিবেদন করা হয়। মন্দিরে কোনো পশুবলি না হলেও মানত বলি হয়। দুইবেলা নিত্যপুজো ছাড়াও প্রতি অমাবস্যার রাতে মায়ের বিশেষ পূজো করা হয়, তখন ভক্তদের ভিড় উপচে পড়ে। এছাড়াও দুর্গা পুজো, অন্নপূর্ণা পুজো, বাসন্তী পুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো এই মন্দিরে পালন করা হয়।
মন্দির খোলা থাকে ভোর পাঁচটা নাগাদ দুপুর একটা এবং বিকেল পাঁচটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত।
No comments:
Post a Comment