Pages

Tuesday, February 28, 2023

শ্রীরামপুরঃ শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দ জীউর মন্দির

শ্রীরামপুরের শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দ জীউর মন্দিরটি ৮৩, ঋষি বঙ্কিম সরণিতে অবস্থিত। এই মন্দিরের ঠিক পাশেই নিউগেট এ্যাথলেটিক ক্লাবের মাঠ।

সামনে নাটমন্দির সমেত এই মন্দিরটি একটি ছিমছাম মন্দির - তিনরত্ন চূড়া বিশিষ্ট। 

এই মন্দিরের নাটমন্দিরটি ১৯৯০সালে ৬নং আখড়া বাটি লেন-বাসী শ্রী শীতল কুণ্ডু, শ্রী বিশ্বনাথ কুণ্ডু এবং ২৪ নং রাজা লেন, কলিকাতা-৯ বাসী শ্রীমতি মেনকা পাল তৈরি করে দেন।  

শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দ জীউর মন্দির

এই মন্দিরের পিছনে একটি দোতলা বাড়ি আছে, যেটি সম্ভবত মন্দিরের ভাড়ার ঘর এবং অতিথিশালা ছিল। এই বাড়িটির অবস্থা এখন খুবই খারাপ। 

শ্রীরামপুর: ড্যানিশ চার্চ - সেন্ট ওলাভস চার্চ


শ্রীরামপুরে ড্যানিশ ঔপনিবেশিক ইতিহাসের 
গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক স্মৃতিস্তম্ভগুলির মধ্যে একটি হল এই ড্যানিশ চার্চ - যার পোশাকি নাম সেন্ট ওলাভ'স চার্চ। পাঁচু গোপাল ভাদুড়ী সরনীতে অবস্থিত এই চার্চটির নামকরণ হয় নরওয়ের ভাইকিং রাজা এবং পরে 'National Saint' সেণ্ট ওলাভ-এর নামে। 

১৭৫৫ সালে ড্যানিশরা শ্রীরামপুরে (বা ফ্রেডরিকনগর) উপনিবেশ স্থাপন করার পরে এখানে ধীরে ধীরে ড্যানিশ জনসংখ্যা বাড়তে থাকে। কাজেই দরকার হয়ে পড়ে একটি উপাসনাস্থলের। ১৭৭৬ সালে ফ্রেডরিকগঞ্জের গভর্নর নিযুক্ত হলেন কর্নেল ওলি'বি। ডেনমার্ক থেকে চাঁদা তুলে মোটামুটি ১৮০০ খ্রীস্টাব্দে প্রোটেস্ট্যান্ট নাগরিকদের প্রার্থনাস্থল স্থাপনের জন্য লুথারিয়ন গির্জার কাজ শুরু হয় শ্রীরামপুরের তৎকালীন গভর্নর ওলি'বি-র সময়।

শ্রীরামপুর পর্ব ১৪ঃ শ্রীরামপুর জেল/উপসংশোধনাগার

আজকে ঋষি বঙ্কিম সরণীর উপর অবস্থিত শ্রীরামপুর জেলটি ১৮০৩ সালে ড্যানিশ প্রশাসন তৈরি করেন। ভারতে এটি ছিল ড্যানিশদের অধীনস্থ দ্বিতীয় কারাগার। ড্যানিশ উপনিবেশ শ্রীরামপুরে খুব বিশাল বড় কিছু না হলেও আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য একটি কোর্টঘর এবং জেল বা কাছারীর (catcherie/cutchery) খুবই দরকার ছিল। বলে রাখা ভালো এই Catcherie শব্দটি এসেছে হিন্দী/বাংলার কাছারী শব্দ থেকে। 

Sunday, February 26, 2023

শ্রীরামপুর পর্ব ১০ঃ মিশন সিমেট্রি


অনেকেই একে 'William Carey Graveyard' বলে নোট করলেও এখানে কেরীসাহেব ছাড়াও অনন্তশয্যায় শায়িত আছেন মার্শম্যান এবং ওয়ার্ডসাহেব এবং তাঁদের পরিবারের মানুষরা। তাই 'মিশন সিমেট্রি' (Mission Cemetry) বলাটাই ঠিক হবে।   

এখানে প্রথম সমাধিত কে ছিলেন বলা মুশকিল - কারণ এখানে বেশ কিছু সমাধি/কবর আছে যেগুলির অবস্থা খুব খারাপ। 

শ্রীরামপুর পর্ব ৯ঃ রাম-সীতা মন্দির

ট্রেনের নিত্যযাত্রীরা মজা করে বলে থাকেন - 'স্যার আই এম পুওর' - কালা নেটিভের বলা এই ইংরিজি বাক্য থেকেই নাকি এসেছে শ্রীরামপুরের নাম। যদিও সেটা সত্যি নয়। শেওড়াফুলীর রাজা রাজচন্দ্র রায়ের প্রতিষ্ঠিত রাম-সীতার মন্দির থেকেই এই অঞ্চলের নামকরণ হয় শ্রীরামপুর। 

১৭৫৩ সাল (৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১১৬০ বঙ্গাব্দ) নাগাদ মনোহর চন্দ্রের পুত্র রাজা রাজচন্দ্র রায় শ্রীপুর গ্রামে বিষ্ণু-অবতার রামচন্দ্রের মন্দির স্থাপন করেন এবং এই মন্দিরের সেবার জন্য শ্রীপুর, গোপীনাথপুর ও মনোহরপুর নামক ৩টি মৌজা দেবোত্তর করে দেন। এভাবেই ‘শ্রীপুর’, ‘শ্রীরাম’ ইত্যাদি নাম থেকে ‘শ্রীরামপুর’ নামটির উৎপত্তি। 

Friday, February 24, 2023

শ্রীরামপুর পর্ব ৮ঃ ইউনিক লজ

বর্ধমান-হুগলীর সীমান্তের দেবীপুর গ্রামের ভট্টাচার্য পরিবার ১৮০০ শতকের শুরুতে যশোরে চলে এলেও ১৮৬০ সালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কথামত কালীনাথ ভট্টাচার্য শ্রীরামপুরে এসে বসবাস শুরু করেন। কালীনাথ ছিলেন সংস্কৃতের পণ্ডিত - এখানে এসে দে পরিবারের শিশুদের শিক্ষক হিসাবে কাজ শুরু করেন। সেই শুরু ভট্টাচার্য পরিবারের শ্রীরামপুরের দে স্ট্রীটে থাকা। কালীনাথের ছেলে দূর্গাপ্রসন্ন (স্থানীয়দের কাছে পাঁচুবাবু বলে পরিচিত) চিকিৎসক হতে চাইলেও পরে পেশা হিসেবে বেছে নেন বাড়ি তৈরির কাজকে। ব্রিটিশদের তত্ত্বাবধানে তৈরি করতে থাকেন একের পর এক জুট মিল, সরকারি-বেসরকারি বাড়ি।

অর্থাজনের সাথে সাথে তিনি ছিলেন শৌখিন মানুষ। কলকাতার রাজেন্দ্র মল্লিকের মার্বেল প্যালেস ও চিড়িয়াখানার অনুকরণে দূর্গাপ্রসন্ন তৈরি করেন এই ইউনিক লজ এবং ডগ কেনেল। মূল দরজার বাইরে আছে দুটি সিংহ মূর্তি - এই জন্য ২১ নম্বর দে স্ট্রিটের এই বাড়িটি ‘সিংহ বাড়ি’ নামে পরিচিত। 

Tuesday, February 21, 2023

শ্রীরামপুর পর্ব ৭ঃ শ্রীরামপুর কলেজ এবং কেরী মিউজিয়াম, পঞ্চানন কর্মকার, চটকল, শ্রীরামপুর জননগর ব্যাপ্টিস্ট চার্চ এবং টেক্সটাইল কলেজ

এরপর চলে আসি শ্রীরামপুর কলেজ এবং কেরি মিউজিয়ামে। 

ভারতে উইলিয়াম কেরি (১৭ আগস্ট ১৭৬১  - ৯ জুন ১৮৩৪) এসেছিলেন মূলত ক্রিশ্চান ধর্ম প্রচার করতে, কিন্তু তাঁর কাজ ধর্ম প্রচারের গণ্ডি পেরিয়ে সমাজ সংস্কারের পথ দেখিয়েছিল। মার্শম্যান এবং ওয়ার্ডের সহায়তায় কেরি শুধু কলেজই শুরু করেননি, তার সাথে সাথে করেছেন অসংখ্য বইএর অনুবাদ - বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায়। তার প্রিন্টিং প্রেস থেকে ছাপা হত সমাচার দর্পণ, দিগদর্শন এবং ফ্রেন্ডস অফ ইন্ডিয়া - এই পত্রিকাগুলোকে আজকের স্টেটসম্যান এর দাদু-ঠাকুরদা বলাই যায়। বাংলায় বাইবেল অনুবাদ ছাড়াও কেরী বহু বই সংস্কৃত ভাষা থেকে অনুবাদ করেন। সত্যি কথা বলতে গেলে বাংলার জন্য কেরী সাহেবের অবিস্মরণীয় কীর্তিকলাপ এই ক্ষুদ্র পরিসরে তুলে ধরা সম্ভব নয়। 

১৭৯২ সালে ইংল্যাণ্ডের ডিডকট শহরে ব্যাপ্টিস্ট মিশনারী সোসাইটি স্থাপিত হয়। এই সোসাইটির উদ্যোগে বিভিন্ন দেশে খ্রীষ্টধর্ম প্রচার শুরু হয়। মূলত এই উদ্দ্যেশ্যেই ১৭৯৩ সালের ১৩ জুন নরদাম্পটনের উইলিয়াম কেরী তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র ফিলিক্স, স্ত্রী ও কন্যাসহ ভারতীয় উপমহাদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। ১১ নভেম্বর তিনি ও তার সহযাত্রীগণ কলকাতায় পৌঁছান। তার পর থেকে কেরী ভারতীয় ভাষাগুলি শিখতে মগ্ন হয়ে পরেন এবং বাংলায় বাইবেল অনুবাদও করে ফেলেছিলেন। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন কারণে ব্রিটিশ সরকার খ্রীস্টান ধর্ম প্রচারের কাজে যুক্ত মিশনারীদের কাজে বিরক্ত হন এবং তাদের কাজে বাধা তৈরি করেন। 

শ্রীরামপুর: দে বাড়ী

মাহেশ, বল্লভপুর ঘুরে এবার গন্তব্য শ্রীরামপুরের মূল শহর। 

এবার আমাদের গন্তব্য দে স্ট্রীট। প্রথমেই যাব দে বাড়িতে। ঠাকুরদালান সম্বলিত এই বাড়ি প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো আর এখানকার দূর্গাপুজোও খুব বিখ্যাত। হুগলি জেলার বনেদী বাড়ির পুজোর লিস্ট করতে বসলে দে বাড়ির পুজোকে বাদ দেওয়া যাবে না। কাছেই দে ঘাট - দে পরিবার নিজেদের জন্য বানালেও এখন সবার জন্যই খোলা। এই ঘাটে এখন বেশ কিছু ছোট মন্দির দেখতে পাওয়া যায় - করুণাময়ী কালীমাতা, চৌরঙ্গী বাবা এবং দূর্গামাতার মন্দির। 

দে বাড়িকে অনেকেই জমিদারবাড়ি বলে ভুল করে, কিন্তু এঁনারা ছিলেন মূলত কলকাতার বড়বাজারের লবণ ব্যবসায়ী। তবে দে'দের শ্রীরামপুরে প্রথম পুরুষ ছিলেন বৃন্দাবন চন্দ্র দে - উনি ১৭০০ সালের দিকে তুলার ব্যাপারি হিসেবে এই শহরে আসেন। ওঁনার উত্তরসূরিরা অবশ্য ইংরেজদের সাথে মূলত লবণের ব্যবসা করেই ১৭৮০ এর দশকে শ্রীরামপুরের অন্যতম ধনী পরিবার হয়ে ওঠেন, সাথে করতেন দিনেমারদের এজেন্ট এবং মহাজনের কাজও। ১৭৪৮ সালে (বা ১৭৫০ সাল) দে পরিবারের দুর্গাপুজোর শুরু হয় রামভদ্র দে-র হাত ধরে।

Monday, February 20, 2023

শ্রীরামপুর: জলকল, হেনরি মার্টিনের প্যাগোডা এবং অল্ডিন হাউস

মাহেশ, জননগর, বল্লভপুর, আকনা ঘুরে এইবার যাচ্ছি শ্রীরামপুর জলকল-এ। 

কলকাতায় জল সরবরাহ শুরু হয় ১৮৭০ সাল নাগাদ। তার আগে গঙ্গার জল বড় বড় জালায় ভরে রাখা হত। শোনা যায় যে ব্রিটিশরা ১৮৯৪ সাল থেকেই গঙ্গার জল নিয়ে গবেষণা করত। তখন জানা যায় পলতার জল বেশি লবণাক্ত, সেই কারণেই পলতায় পানীয় জল শোধনাগার গড়ে ওঠে। পলতা-বারাকপুরের বিপরীতে রয়েছে শ্রীরামপুর (হুগলী) - সেখানকার জল তুলনায় কম লবনাক্ত। ফলে এখানে জল সরবরাহ কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয় হাওড়া এবং হুগলীতে জল সরবরাহের জন্য। 

১৮৯৬ সালের ১০-ই জানুয়ারি বাংলার ছোট লাট আলেকজান্ডার ম্যাকেঞ্জি ৮২ বিঘা জমির উপর বার্ন কোম্পানির হাতে তৈরি করা হাওড়া মিউনিসিপ্যালিটির পানীয় জল ব্যবস্থা উদ্বোধন করেন।  এরমধ্যে জল থিতানোর জন্যে ৪ টি পুকুর এবং পরিশোধনের জন্য ১১ টি ফিল্টার বেড আছে। আজ এরই নাম হাওড়া ওয়াটার্স ওয়ার্ক্স - এখান থেকে দৈনিক ১২৬ লক্ষ গ্যালন জল হাওড়া শহরের পঞ্চানন তলা রোড, সালকিয়া, কৈপুকুর এবং শিবপুর জলাধারের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়।

জলকলের ভিতরে পুরোনো বাড়ী ১

Saturday, February 18, 2023

শ্রীরামপুর: মদনমোহন মন্দির

মদনমোহন মন্দিরটি শ্রীরামপুরের আকনা, চৌধুরী পাড়াতে অবস্থিত। বল্লভপুরের রাধাবল্লভ জীউ মন্দির থেকে হেঁটেই এই মন্দিরটিতে আসা সম্ভব। শ্রীরামপুর স্টেশন থেকে প্রায় ২ কিমি দূরে আকনা চৌধুরীপাড়া। 

মদনমোহন মন্দির (২০২০)

এখন যেখানে ওয়ালশ হাসপাতাল ঠিক সেই জায়গায় দক্ষিণ ভারতীয় রামানুজ সম্প্রদায়ের (অন্য মতে নেপালের ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী সম্প্রদায়) কিছু  বৈষ্ণব বাস করতেন। ভজন-নামসংকীর্তন করে তাঁরা দিন কাটাতেন। একটি বৈষ্ণব আখড়া গড়ে ওঠে এখানে। শেওড়াফুলির রাজা মনোহর রায় এই জমিটি এই বৈষ্ণবদের দান করেন। তাঁরা সেই আখড়ায় মদনমোহনের একটি বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু হঠাৎ তাঁরা কোন কারণে এই আখড়া ছেড়ে চলে যান, বিগ্রহটি এখানেই থেকে যায়। আখড়া-ভবনটি আস্তে আস্তে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং জঙ্গলে ঢাকা পড়ে যায়। 

শ্রীরামপুর: বল্লভপুরের রাধাবল্লভ জীউ মন্দির

এবার আসুন বল্লভপুর। এখানে দেখে নিন ২৫০ বছরের বেশি পুরোনো রাধাবল্লভ মন্দির, সংলগ্ন রাসমঞ্চ, রাধা বল্লভ ঘাট। পাশেই আছে গঙ্গার ধারে নবনির্মিত শশ্মানকালীর মন্দির এবং উগ্রতারা তীর্থ। এর ঠিক উলটো পাড়ে বারাকপুর ও টিটাগড়ের মাঝে অন্নপূর্ণা মন্দির এবং রাসমণি ঘাট।  

রাধাবল্লভ জীউ মন্দির

এই রাধাবল্লভের মন্দির থেকেই এই এলাকার নাম হয় বল্লভপুর। 

এই মন্দিরের ইতিহাস সম্পর্কে দুটি মত আছে। একমত বলে যে এই মন্দিরের বিগ্রহের প্রতিষ্ঠা করেন রুদ্ররাম। রুদ্ররাম ছিলেন শাক্ত এবং তাঁর মামা ছিলেন শ্রীরামপুরের চাতরা নিবাসী বৈষ্ণবচূড়ামণী, শ্রীচৈতন্য পরিকর, পণ্ডিত কাশীশ্বর।

কাশীশ্বর পণ্ডিত ছিলেন অত্যন্ত গোঁড়া বৈষ্ণব। তিনি প্রতিদিন নিজের হাতে তাঁদের কুলদেবতা শ্রীকৃষ্ণের পূজা করতেন। তিনি কোন অ-বৈষ্ণবকে এই বিগ্রহ  ছুঁতে দিতেন না। একদিন কোন কারণে তাঁর বাড়িতে ফিরতে দেরি দেখে তাঁর ভাগনে রুদ্ররাম শ্রীকৃষ্ণের পূজা সম্পন্ন করেন। বাড়ি ফিরে এসে কাশীশ্বর এই দেখে খুবই রাগ করেন এবং রুদ্ররামকে গালিগালাজ করেন। মনের দুঃখে রুদ্ররাম বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এসে আকনায় (এখন বল্লভপুর) গঙ্গার ধারে এক জায়গায় আশ্রয় নেন এবং শ্রীকৃষ্ণের প্রার্থনায় মগ্ন হন। 

Friday, February 17, 2023

শ্রীরামপুর - ইতিহাসের পাতা থেকেঃ জননগর

শ্রীরামপুরের ইংরিজি বানান বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম ব্যবহার হয়েছে - Serampore, Srirampur, Srirampore, Shrirampore, Shreerampur, Shreerampore। তবে শ্রীরামপুর রেলস্টেশনকে ভারতীয় রেল SHRIRAMPUR লেখে এবং আধুনিক ড্যানিশ কাগজপত্রে এবং শ্রীরামপুর কলেজের ইংরিজি বানানে SERAMPORE বলেই লেখা আছে - তাই এই দুটি বানানই ব্যবহার করা উচিত।

মাহেশের রথ দেখা শেষ, এবার আসুন মাহেশের অন্যান্য ঐতিহাসিক জায়গাগুলি ঘুরে দেখি। 

Thursday, February 16, 2023

শ্রীরামপুরঃ মাহেশ - জগন্নাথ মন্দির ও রথযাত্রা

প্রথমেই আসি মাহেশ-এ। শ্রীরামপুরের মেন টাউন থেকে একটু দূরে মাহেশ এর রথযাত্রা পৃথিবীর দ্বিতীয় প্রাচীন রথযাত্রা (প্রাচীনতমটি হল পুরীর)। 


শোনা যায় নিজের হাতে জগন্নাথদেবকে ভোগ খাওয়াবেন এই ইচ্ছা নিয়ে ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী নামে এক বাঙ্গালী সাধু পুরী গেছিলেন। কিন্তু বাধ সাধল পুরীর ওড়িয়া পাণ্ডারা। তারা তাঁকে মেরেধরে মন্দির থেকে বের করে দিল। তখন দুঃখিত, অপমানিত ধ্রুবানন্দ আমরণ অনশনে বসলেন। তৃতীয়দিনে স্বপ্নাদেশ পেলেন ধ্রুবানন্দ, ভাগীরথী নদীর ধারে বাংলায় মাহেশ নামে এক জায়গায় ভগবান এক দারুব্রহ্ম (নিমকাঠ) পাঠাবেন এবং ধ্রুবানন্দ যেন সেই দারুব্রহ্ম থেকে জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার মূর্তি বানিয়ে পুজো শুরু করেন এবং জগন্নাথদেব সেখানেই ধ্রুবানন্দের হাতের ভোগ খাবেন। প্রভু বললেন, ‘পাবে কাষ্ঠ তুমি, সুরধুনী নীরে কর গিয়া উত্তোলন। দারু কারুকর পাইবে সত্ত্বর যাহা হবে প্রয়োজন।’ 

শ্রীরামপুর - ইতিহাসের পাতা থেকেঃ শুরুর কথা

২০১৮ সালে শ্রীরামপুরে গঙ্গার ধারে একটি পুরোনো ভাঙ্গাবাড়ি সংস্কার হয়ে ড্যানিশ ট্রাভর্ন বলে একটা নতুন হোটেল এবং রেস্তোরাঁ খোলে শ্রীরামপুরে। প্রথমে কিছুদিন রাজ্য ট্যুরিজম বোর্ড এটিকে চালালেও পরে এটিকে পরিচালনার দায়িত্ব আসে পার্ক হোটেলের হাতে। ঐতিহাসিক ড্যানিশ ট্রাভর্নের হাত ধরে রাজ্যের ফুড-মানচিত্রে শ্রীরামপুর স্থান দখল করে নেয়। খাওয়ার সাথেই আসে ঘোরা। ইতিহাস প্রেমী হন বা না হন শ্রীরামপুর এলে দারুণ দারুণ দেখার জায়গাগুলো মিস করবেন না। কে জানে ক'বছর পর এসব আর তাদের জায়গায় থাকবে কি না!

ব্যারাকপুরের বাসিন্দা হওয়ায় বহুবার ধোবিঘাটে এসে ওপাড়ের শ্রীরামপুরের গীর্জার চূঁড়া দেখেছি। কিন্তু তার তাৎপর্য বা ঐতিহাসিক গুরুত্ব নিয়ে কোনদিন ভাবিনি। যাইহোক ঘুরতে যাওয়ার আগে একটু ইন্টারনেট সার্চ করতেই যা বুঝলাম ইতিহাসের খনি লুকিয়ে আছে গঙ্গার ওপাড়ে। 

গঙ্গার এই পাড়ে ব্যারাকপুর আর উল্টোপাড়ে শ্রীরামপুর, চন্দননগর, চুঁচুড়া আর ব্যান্ডেল - এই পাঁচটি শহর ছিল ইউরোপীয় উপনিবেশ - এবং এই অঞ্চলটিকে বলা হত - লিটল ইউরোপ। 

ড্যানিশরা ভারতে পা রাখে ১৬১৮ সাল নাগাদ, বিভিন্ন ইউরোপীয়ান ব্যবসায়ীদের তারা এসে পৌঁছায় মাদ্রাজে। ১৬২০ সালের নভেম্বরে ড্যানিশ ক্যাপ্টেন Ove Gjedde পণ্ডিচেরি থেকে ১২০ কি.মি. দক্ষিণে ট্র‍্যাঙ্কুবারে (বর্তমান নাম থারাংগম্বাডি) ভারতে প্রথম ড্যানিশ পোস্ট প্রতিষ্ঠা করেন। ড্যানিশরা বাংলায় প্রথম আসে ১৬৭৬ এর দিকে কিন্তু প্রথম ড্যানিশ কলোনি গড়ে ওঠে আরো পরে, ১৬৯৮ সালে গোণ্ডলপাড়ায় - ফ্রেঞ্চ কলোনি চন্দননগরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে - এক্ষেত্রে ড্যানিশ ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি মোগল সম্রাট আজিম-উস-সান (আওরাঙ্গজেবের নাতি)-এর থেকে ব্যবসার জন্য অনুমতি নিয়েছিল। ১৭১৪ সাল নাগাদ ড্যানিশ ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি বাংলা থেকে বিদায় নেয়, কিন্তু কিছু ড্যানিশ ব্যবসায়ী ফরাসিদের চন্দননগরকে কেন্দ্র করে তখনো এই অঞ্চলে ব্যবসা চালিয়ে যায়। কারণ ইউরোপীয় রাজনীতিতে ডেনমার্ক ছিল নিরপেক্ষ, এর ফলে ড্যানিশদের সাথে ইংরেজদের তথা ব্রিটিশ ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির ভাল সম্পর্ক ছিল। ১৭৩০ সাল নাগাদ ড্যানিশ ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি (Ostindisk Kompagni) বিলুপ্ত হয়ে ড্যানিশ এশিয়াটিক কোম্পানি (Asiatisk Kompagni) তৈরি হয়। 

১৭৫৫ সালে বাংলার নবাব আলিবর্দী খান (জন্ম ১৬৭১, রাজত্বকাল ১৭৪০-১৭৫৬) একটি ফরমান দেন, যার সুবাদে ড্যানিশ এশিয়াটিক কোম্পানি শ্রীরামপুরে একটি ট্রেডিং পোস্টের সূচনা করে। ড্যানিশরা সরকারি ভাবে ৮ই অক্টোবর, ১৭৫৫ থেকে এই অঞ্চলে ব্যবসা শুরু করে। এই এলাকাই কিছুদিনের মধ্যে দিনেমারডাঙ্গা নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। এই ফরমান পেতে ফরাসিরা ড্যানিশদের সাহায্য করেছিল। এই ফরমানের জন্য ড্যানিশ এশিয়াটিক কোম্পানীর খরচা হয়েছিল আনুমানিকভাবে দেড় লাখ টাকা। ১৭৫৭ সাল নাগাদ ড্যানিশরা শ্রীপুর, আকনা, গোপীনাথপুর, মোহনপুর ও পেয়ারাপুর এই পাঁচ গ্রাম নিয়ে যে শহর গঠন করে, ডেনমার্কের তৎকালীন রাজা পঞ্চম ফ্রেডরিকের (জন্ম ১৭২৩, রাজত্বকাল ১৭৪৬-১৭৬৬) নামে তার নাম দেয় ফ্রেডরিকনগর। দিনেমার বা ড্যানিশরা এই জায়গার ইজারা বাবদ শেওড়াফুলি-রাজকে প্রতি বছর ১৬০১ সিক্কা টাকা খাজনা দিত। ১৭৭০ সাল অবধি এই এলাকায় খুব বেশি নগরায়ণ হয়নি - চারদিকে বেশির ভাগ জমিই ছিল চাষের জমি এবং ড্যানিশরাও মাটির বাড়িতেই থাকত। 

আমেরিকান স্বাধীনতা যুদ্ধ (১৭৭৫-১৭৮৩)-এর পরবর্তী সময়ে শ্রীরামপুরের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি শুরু হয়। সেই সময়ে ইউরোপের শক্তিশালী দেশগুলোর মধ্যে যে যুদ্ধ হয় তাতে ডেনমার্ক নিরপেক্ষ থাকায় অনেক ইংরেজ, ফরাসী এবং ডাচ এখানে আশ্রয় নেয়। এবং ড্যানিশরা তাদের জাহাজে করে এদের মালপত্র ইউরোপে বহন করে নিয়ে যেতে শুরু করে। এই সময়ে অনেক দেশীয় ব্যবসায়ী, তাঁতশিল্পী এবং কারিগরেরাও শ্রীরামপুরে এসে থাকতে শুরু করেন। এদের অনেকেই ডেন-দের সাথে ব্যবসা করে প্রভূত টাকাপয়সা উপার্জন করেন। ১৮০০ সাল নাগাদ শ্রীরামপুরের জনসংখ্যা দাঁড়ায় ১০ হাজারেরও বেশি। এই সময় থেকেই ক্রীশ্চান ব্যাপ্টিস্ট মিশন শ্রীরামপুরে ধর্মপ্রচার শুরু করেন (এই ব্যাপারে আরো বিস্তারিত বলব শ্রীরামপুর কলেজ নিয়ে)। নেপোলিয়নের যুদ্ধের (১৮০৩-১৮১৫) পর ড্যানিশদের ব্যবসা বাণিজ্য ভীষণরকম ভাবে ধাক্কা খায়। ইংরেজরা ১৮০৮ থেকে ১৮১৫ অবধি ড্যানিশদের সরিয়ে শ্রীরামপুরের দখল নেয়। ১৮১৫ সালে ড্যানিশরা আবার ক্ষমতায় এলেও সারা ভারতব্যাপী ইংরেজদের আধিপত্যে আর কামড় বসাতে পারেনি। 

১৮৪৫ সালে ড্যানিশরা শ্রীরামপুরকে ইংরেজদেরকে বিক্রি করে দেয়। তখন ইংরেজদের রাজধানী ছিল কলিকাতা, ফলে সদ্য অধিকৃত এই ড্যানিশ কলোনিকে নিয়ে ইংরেজ সরকার বেশি মাথা ঘামানোর প্রয়োজনবোধ করেনি। যদিও শ্রীরামপুর মহকুমা ইংরেজ আমলেই ১৮৪৭ সালে তৈরি হয় এবং ১৮৬৫ সালে তৈরি হয় শ্রীরামপুর পুরসভা।

শ্রীরামপুর নামকরণ মোটামুটি দুশো সত্তর বছরের হলেও তার অনেক আগে থেকেই ভাগীরথীকূলবর্তী অন্যস্থানের মতােই এই জনপদও সম্পন্ন ছিল - কেবল বাহ্য সম্পদে নয়, সাংস্কৃতিক চর্চাতেও। পনেরো শতকে লেখা বিপ্রদাস পিপিলাই-এর 'মনসামঙ্গল' কাব্যে আকনা ও মাহেশ নামের উল্লেখ রয়েছে। শ্রী চৈতন্যের সমকালীন পুঁথিতে এই দুটি নাম ছাড়াও চাতরার উল্লেখ পাওয়া যায়। টেভার্নিয়ার-এর ভ্রমণবৃত্তান্তে মাহেশের রথযাত্রার বিবরণ রয়েছে। আবুল ফজলের  'আইন-ই-আকবরী' গ্রন্থে রাজা মানসিংহের পূর্ব-ভারতে আগমন (১৫৮৯-৯০ খ্রিস্টাব্দ) ও শ্রীপুরে শিবির স্থাপনের বৃত্তান্ত থেকে এবং আবদুল হামিদ লাহোরির 'পাদশাহনামা'য় শ্রীপুরকে 'শ্রীরামপুর' নামে চিহ্নিতকরণ থেকেও অনুমান করা যায় যে, মুঘল আমলের আগে থেকেই উল্লিখিত স্থানগুলি প্রসিদ্ধি ছিল। পনেরো শতকে চৈতন্যের বৈষ্ণববাদের প্রভাবে এখানকার কয়েকটি স্থান হিন্দুদের তীর্থকেন্দ্র হয়ে ওঠে।

আজকের দিনে দাঁড়িয়ে শ্রীরামপুরকে সেই ইতিহাসের সাথে মেলানো যাবে না। কলকাতা থেকে ২৫ কিমি দূরের শ্রীরামপুর আর-একটা পুরোনো মফস্বল শহরের মতোই ঘিঞ্জি, এক গুচ্ছ হাইরাইজ গঙ্গার ধারে বোকার মত দাঁড়িয়ে, নোংরা রাস্তাঘাট এবং সরু গলিতে ভর্তি। কয়েক বছর আগেও শ্রীরামপুরের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য নিয়ে কারো কোন হেলদোল ছিল না।

২০০৬-০৮ সাল নাগাদ ডেনমার্ক সরকার এবং ওদেশের ন্যাশনাল মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ তাদের পুরনো কলোনি শ্রীরামপুরকে নতুন করে সাজাতে উদ্যোগী হয়ে ওঠে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হেরিটেজ কমিশনও এই 'শ্রীরামপুর ইনিশিয়েটিভ' এ যোগ দেয়। তার-ই ফলস্বরূপ ড্যানিশ ট্র‍্যাভের্ন, সেন্ট ওলাভ চার্চ, ড্যানিশ গভর্ণমেন্ট হাউস, নর্থ গেট, সাউথ গেট - ইত্যাদির আমূল সংস্কার হয়। ২০১৬ সালে ইউনেস্কো সেন্ট ওলাভ চার্চের সংস্কারের কাজকে Asia-Pacific Awards for Cultural Heritage Conservation সম্মানে ভূষিত করে। 

এই প্রসঙ্গে বলা ভালো যে শ্রীরামপুরের Heritage Restoration  নিয়ে যেটুকু কাজ হচ্ছে, তা মূলত ড্যানিশদের বানানো বাড়িগুলো নিয়ে। শ্রীরামপুরের ইতিহাসকে ভাগ করা যায় - ড্যানিশ-পূর্ব শ্রীরামপুর এবং বৈষ্ণব ধর্মের জনপ্রিয়তা (১৭৫৫ এর আগে), ড্যানিশ উপনিবেশ শ্রীরামপুর, ড্যানিশদের সমসাময়িক বাঙ্গালী কালচার (১৭৫৫-১৮৪৫), ড্যানিশ পরবর্তী ব্রিটিশ দখল ও শিল্পায়ন (১৮৪৫-১৯৪৭) এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়। কালের স্রোতে অনেক পুরোনো বাড়ি, স্থাপত্য, রাস্তা আজ ইতিহাসকে সঙ্গে নিয়ে হারিয়ে গেছে। 

হেরিটেজ ওয়াকে কি কি দেখবেন এই ধারাবাহিক পোস্টে লেখা রইল। 

Wednesday, February 01, 2023

Chinese Eateries in and around Old Cheenapara of Kolkata (টেরিটি বাজার)

Frankly speaking, today old China Town of Kolkata is quite gloomy compared to Tyangra - the new China Town in terms of food offerings. Tyangra has some very good restaurants with good ambience. And Khoka goes there to have Chicken Chowmein and Chili fish (Ref: Dwitiyo Purush). 

Kitchen of a Chinese Eating House, Tyangra (1978)
(via facebook)

Jokes apart, Tiretta Bazaar has its own old school charm and they don't burn your pockets at all. Being quite affordable and location near to College street, hence college goers have quite heavy footfall here. Another thing is none of these Tiretta 'eating houses' serve alcohol while Tyangra is famous for cheap boozes with good Chinese starters.