Pages

Friday, August 19, 2022

Barrackpore Christian Cemetery - Commonwealth War Graves

ব্যারাকপুরে বেশ কিছু ঐতিহাসিক 'Hidden Gem' আছে। তার মধ্যে বেশিরভাগই আর্মি বা পুলিশের জায়গাতে অবস্থিত বলে সাধারণের নাগালের বাইরে। আজকে যেটা নিয়ে কথা বলব সেটা কিন্তু সবার নাগালের মধ্যেই - কিন্তু Cantonment এরিয়ার ঠিক বাইরে আর রাস্তা থেকে একটু ভিতরে থেকে বলে বেশিরভাগ মানুষই এর ব্যাপারে জানেন না। ছোটবেলায় এই সব এরিয়াতে সাইকেল চালিয়ে অনেক ঘুরেছি, আমিও জানতাম না এর ব্যাপারে। এটি হল ব্যারাকপুরের খ্রিস্টান কবরস্থান বা Commonwealth War Graves। ২০১৯ সালে West Bengal Heritage Commission এই জায়গাটিকে 'হেরিটেজ সাইট' হিসেবে নথিভুক্ত করেন - গেটে লাগানো হয় ব্লু প্লেক (Blue Plaque)। 

ব্যারাকপুরের খ্রীষ্টান কবরস্থান -  Commonwealth War Graves

ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায় যে ব্যারাকপুরের British Army Cantonment স্থাপিত হয়েছিল ১৭৭২ সালে। যার মানে দাঁড়ায় যে ব্যারাকপুর-ই ভারতের সবচেয়ে পুরোনো Cantonment। ১৮০৫ সালে তখনকার কলিকাতা এবং ব্যারাকপুরের সহজ যোগাযোগের জন্য তৈরি হয় আজকের বি.টি. রোড (ব্যারাকপুর ট্রাঙ্ক রোড)। মঙ্গল পাণ্ডের নেতৃত্বে সিপাহী বিদ্রাহ হয় ১৮৫৭ সালে। আর ব্যারাকপুরে রেল আসে ১৮৬২ সাল নাগাদ।

এই খ্রিস্টান কবরস্থানটি সম্ভবত ১৮২০ সাল নাগাদ তৈরি হয়। যদিও এখনো এই কবরস্থানটিতে নতুন দেহ কবর দেওয়া হয়, এখানে মূলত প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মারা যাওয়া ব্রিটিশ সৈন্যদের দেহ কবর দেওয়া আছে। পরবর্তী সময়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মারা যাওয়া কিছু ব্রিটিশ সৈন্যদের দেহও এখানে কবর দেওয়া আছে। আরো পরে কিছু দেহ স্থানান্তরিত হয় রাঁচীতে - সেখানকার Commonwealth War Graves-এ। মূল ফটকটি ছাড়া পুরো কবরস্থানটি পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। আমরা বাইরে থেকে সেই পাঁচিলের গায়ে কোন ভাঙ্গাচোরা দেখতে পাইনি। হলুদ রঙ করা মূল ফটকটি ব্রিটিশ স্থাপত্যে তৈরি - সেই Gothic structure, মোটা দেওয়াল, এবং মূল ফটকের দু'দিকে দুটি ঘর। একটি ঘরে কেয়ারটেকার থাকেন, আরেকটিতে কফিন রাখা হয়, থাকে মাটি খোঁড়ার জিনিসপত্র ইত্যাদি। 


৬ আগস্ট ২০২২-এ আমরা যখন Commonwealth War Graves-এ যাই তখন বর্ষা চলছে (যদিও সেদিন বেশ সুন্দর আকাশ ছিল) - এই কবরস্থান পুরো সবুজে সবুজ। আগাছা আর বড় বড় ঘাসে ঢাকা পড়ে গেছে বেশিরভাগ কবরস্থানগুলি। প্রায় ২০ বিঘা জুড়ে এই সবুজের তলায় আছেন অনেক অনেক মানুষ, খুব শান্তিতে। অনেক খুঁজে খুঁজে কিছু পুরোনো কবরস্থান পাওয়া গেল। আমাদের দেখা সবচেয়ে পুরোনো কবরটি ১৮৬৪ সালের - উইলিয়ম ওয়াইট স্মিথের। তবে Alexander Landale (মৃত্যুঃ ১৮৭১)-এর কবরটি সবচেয়ে জমকালো - ঢুকেই কবরের উপরের স্থাপত্যটিকে চোখে পড়ে। 
একমাত্র Caretaker এবং Undertaker জানালেন যে নভেম্বরের পরে এই সব আগাছা কেটে ফেলা হবে, তখন আসলে পাঁচিলের ধারের পুরোনো কবরস্থানগুলোকে দেখা যাবে।  


সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল এই Caretaker মানুষটি - ওনার নাম S.K. Alam। শুনে চমকে গেলেন কি? আমি অবশ্য চমকাইনি কারণ এই কলকাতা শহরে অনেক কিছুই খুব আশ্চর্যজনক - যেমন ধরুন কলকাতার ইহুদি (Jew)-দের ধর্মস্থান সিনাগগগুলিকে দেখাশোনা করেন মুসলিম মানুষরাই। ১৯৯৭ সালে ওনার মা মারা যাওয়ার পর থেকে ২৫ বছর ধরে আলমভাই একাই টিকিয়ে রেখেছেন এই খ্রিস্টান কবরস্থানকে। উনি ২৪x৭ এখানেই মেনগেটের লাগোয়া একটি ছোট্ট ঘরে থাকেন - সাথে থাকে প্রায় নয়-দশটি কুকুর। ব্যারাকপুর Diocese থেকে খবর আসে কেউ মারা গেছেন, সাথে সাথে আলমভাইএর ব্যস্ততা শুরু হয়। Catholic, Protestant এবং Pentecost সব ধরনের খ্রিস্টান দেহই এখানে কবর দেওয়া হয়।  বিদেশ থেকেও মৃতদেহ আসে - আলমভাই দেখালেন দুবাই থেকে আসা একটি কফিন। 

ভূত দেখেছেন কি? প্রশ্ন করলে অনাবিল হাসেন আলমভাই - আমার ইংলিশ তো এঁদের কাছ থেকেই শেখা। 





যাবেন কিভাবে? গুগল ম্যাপসে গিয়ে ব্যারাকপুর কমনওয়েলথ গ্রেভস দিয়ে সার্চ করলেই এর লোকেশন পেয়ে যাবেন। স্টেশন বা চিড়িয়ামোড় থেকে টোটো রিসার্ভ করে যাওয়াটাই সুবিধার। ফেরার সময় হেঁটে পুরোনো কোর্ট অবধি এসে বাস/অটো/টোটো পেয়ে যাবেন। 

No comments: